দানাদার ডাঁটা
মৃত্যুঞ্জয় রায়
দানাদার ডাঁটা আমেরিকায় এক হারিয়ে যাওয়া ফসল। প্রায় আট হাজার বছর ধরে এই পৃথিবীর বুকে দানাদার ডাঁটা চাষ হচ্ছে। কয়েক হাজার বছর আগে প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতায়ও আমেরিকানদের কাছে দানাডাঁটার দানা ছিল প্রধান খাদ্য। ভাতের মতো তারা এর দানা রেঁধে খেত। মেক্সিকোয় পনেরো শতকে স্প্যানিশ বিজয়ের পর আমেরিকানদের খাবার টেবিল থেকে ধীরে ধীরে এই খাবার উঠে যায়। বহুকাল সেভাবেই এ ফসলটি হারানো ছিল। আমেরিকায় ফসল হিসেবে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে গবেষণার বিষয় হিসেবে আবার সেই হারিয়ে যাওয়া ফসলটি ফিরে আসে। এরপর ধীরে ধীরে দানার জন্য চাষ হতে থাকে আফ্রিকা, ভারত ও নেপালে। গত দুই দশকে চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপে এর চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গত কয়েক বছরে আমাদের দেশেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা এ ফসলটি নিয়ে গবেষণা করে এ দেশে চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে এই ফসলকে ‘আগামী দিনের ফসল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা গ্রামাঞ্চলে এ ফসল চাষে তেমন কোনো খরচ হয় না, সহজে ফসল সংগ্রহ ও মাড়াই করা যায়, ধানের মতো চাষ করতে বেশি পানি লাগে না, শুষ্ক পরিবেশেও চাষ করা যায়, ধানের চেয়ে এর দানায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি প্রোটিন আছে এবং সহজে রান্না করা যায়।
দানাডাঁটার গাছ দেখতে অনেকটা মোরগজবা ফুলগাছের মতো। সারা বিশ্বে Amaranthus গনের প্রায় ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। দানাডাঁটার রয়েছে তিনটি প্রজাতি, যারা কাউনের ছড়ার মতো বড় ছড়া উৎপন্ন করে ও সেসব ছড়ার দানা খাওয়া যায়। এগুলো হলো Amaranthus hypochondriacus, A. cruentus ও A. caudatus প্রথমোক্ত প্রজাতি বেশি চাষ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দানাডাঁটার গাছ প্রায় ০.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা বড় ও চওড়া, প্রচুর ফুল লম্বা দোলানো ছড়ায় গাদাগাদি করে ফোটে। পুষ্পমঞ্জরি ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রজাতি ও জাতভেদে পুষ্পমঞ্জরির রঙ মেরুন, সবুজ ও হলুদ বা সোনালি হয়ে থাকে। পাতার রঙও কমলা, সবুজ ও লালচে হয়ে থাকে। তবে মেরুন রঙ প্রায় সবগুলো প্রজাতিতেই থাকে। ফুল ফোটা অবস্থায় গাছ দেখতে খুব সুন্দর দেখায়। পুষ্পমঞ্জরি নিচের দিকে ঝুলতে থাকে। কিছু কিছু পুষ্পমঞ্জরি আগা ছাড়া নিচের পত্রকক্ষেও উৎপন্ন হতে দেখা যায়। গাছ খরা সইতে পারে।
ব্যবহার
দানাডাঁটার গাছ ডাঁটাগাছের মতোই দেখতে, তবে এর পাতা বা ডাঁটা খাওয়া হয় না। চিনা বা কাউনের মতো এর বীজ বা দানা রেঁধে খাওয়া যায়। ভাত হিসেবেও খাওয়া যায়। এর বীজ দিয়ে খই ভাজা যায়, ময়দা তৈরি করা যায়। খইয়ের সাথে গুড় মাখিয়ে লাড্ডু ও মোয়া বানানো হয়। ভারতে এই লাড্ডু খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এ জন্য ডাঁটার দানাকে কখনো কখনো pseudocereal নামে অভিহিত করা হয়।
পুষ্টিমূল্য
দানাডাঁটার অন্যতম আকর্ষণ হলো এর বীজ বা দানা, যার রঙ সোনালি ও অত্যন্ত পুষ্টিকর। শিমের বিচি ছাড়া আর কোনো অশিম বীজে দানাডাঁটার বীজের মতো প্রোটিন নেই। এর বীজে প্রোটিনের পরিমাণ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। শুধু প্রোটিনই নয়, এর আঁশও বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না না করা দানায় আছে কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম, চিনি ১.৭ গ্রাম, আঁশ ৭ গ্রাম, চর্বি ৭ গ্রাম, প্রোটিন ১৪ গ্রাম, পানি ১১ গ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.২ মিলিগ্রাম, নায়াসিন বা ভিটামিন বি৩ ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৯ ৮২ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ৩.৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫৫৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৫০৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ২.৯ মিলিগ্রাম। ডাঁটাবীজের দানা সম্পূর্ণ গ্লুটেনিন মুক্ত। চালে গ্লুটেনিন আছে। যাদের গ্লুটেনিন অ্যালার্জি আছে তারা নিশ্চিন্তে ডাঁটার দানা দিয়ে ভাত রেঁধে বা এর ময়দা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেতে পারেন।
চাষাবাদ
দানাডাঁটার চাষ ডাঁটার মতোই। জমি চাষ দিয়ে সমতল করতে হবে। যেকোনো মাটিতেই এর চাষ করা যায়। তবে যেখানে পানি জমে না ও উর্বর, সেরূপ মাটিতে ভালো হয়। গম কাটার পর সে জমিতে দানা ডাঁটার চাষ করা যায়। যে জমিতে দানাডাঁটার চাষ করা হবে সে জমিতে দুই বছর পর আবার দানাডাঁটার চাষ করা উচিত হবে। এর মধ্যে সেই জমিতে সয়াবিন বা ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে।
বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করে তারপর মূল জমিতে সেসব চারা লাগাতে হবে। এর চারা ভুট্টা বা সয়াবিনের চারার মতো শক্ত নয়, বেশ নরম। তাই চারা তোলা ও লাগানোর কাজ খুব সাবধানে করতে হবে। প্রতি একর জমি চাষের জন্য ১ কেজি বীজ লাগবে। বীজ বোনার সময় হলো মার্চ-মে মাস। এর পরে বীজ বুনলে ফলন কমে। সারিতে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার। এর জন্য ভুট্টার মতো বেশি পরিমাণে ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার নেই। একরে মাত্র ২০ থকে ৪০ কেজি ইউরিয়া সার যথেষ্ট। চারা লাগানোর কয়েক দিন আগেই জমি চাষের সময় এই সার ছিটিয়ে দেয়া যায়।
ফসল কাটা ও সংরক্ষণ
অক্টোবরে ফসল পেকে গেলে ছড়া কেটে সংগ্রহ করতে হবে। উঠানে পলিথিন বিছিয়ে তাতে ছড়াগুলো বিছিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে পিটিয়ে বীজ ছাড়াতে হবে। ছেড়ে পরিষ্কার করে দানা আলাদা করে ড্রামে বা পলিথিনের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে। গুদামে রাখার সময় বীজে বা দানায় ১০-১২ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকা উচিত নয়।
দানাডাঁটার গাছ দেখতে অনেকটা মোরগজবা ফুলগাছের মতো। সারা বিশ্বে Amaranthus গনের প্রায় ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। দানাডাঁটার রয়েছে তিনটি প্রজাতি, যারা কাউনের ছড়ার মতো বড় ছড়া উৎপন্ন করে ও সেসব ছড়ার দানা খাওয়া যায়। এগুলো হলো Amaranthus hypochondriacus, A. cruentus ও A. caudatus প্রথমোক্ত প্রজাতি বেশি চাষ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দানাডাঁটার গাছ প্রায় ০.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা বড় ও চওড়া, প্রচুর ফুল লম্বা দোলানো ছড়ায় গাদাগাদি করে ফোটে। পুষ্পমঞ্জরি ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রজাতি ও জাতভেদে পুষ্পমঞ্জরির রঙ মেরুন, সবুজ ও হলুদ বা সোনালি হয়ে থাকে। পাতার রঙও কমলা, সবুজ ও লালচে হয়ে থাকে। তবে মেরুন রঙ প্রায় সবগুলো প্রজাতিতেই থাকে। ফুল ফোটা অবস্থায় গাছ দেখতে খুব সুন্দর দেখায়। পুষ্পমঞ্জরি নিচের দিকে ঝুলতে থাকে। কিছু কিছু পুষ্পমঞ্জরি আগা ছাড়া নিচের পত্রকক্ষেও উৎপন্ন হতে দেখা যায়। গাছ খরা সইতে পারে।
ব্যবহার
দানাডাঁটার গাছ ডাঁটাগাছের মতোই দেখতে, তবে এর পাতা বা ডাঁটা খাওয়া হয় না। চিনা বা কাউনের মতো এর বীজ বা দানা রেঁধে খাওয়া যায়। ভাত হিসেবেও খাওয়া যায়। এর বীজ দিয়ে খই ভাজা যায়, ময়দা তৈরি করা যায়। খইয়ের সাথে গুড় মাখিয়ে লাড্ডু ও মোয়া বানানো হয়। ভারতে এই লাড্ডু খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এ জন্য ডাঁটার দানাকে কখনো কখনো pseudocereal নামে অভিহিত করা হয়।
পুষ্টিমূল্য
দানাডাঁটার অন্যতম আকর্ষণ হলো এর বীজ বা দানা, যার রঙ সোনালি ও অত্যন্ত পুষ্টিকর। শিমের বিচি ছাড়া আর কোনো অশিম বীজে দানাডাঁটার বীজের মতো প্রোটিন নেই। এর বীজে প্রোটিনের পরিমাণ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। শুধু প্রোটিনই নয়, এর আঁশও বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না না করা দানায় আছে কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম, চিনি ১.৭ গ্রাম, আঁশ ৭ গ্রাম, চর্বি ৭ গ্রাম, প্রোটিন ১৪ গ্রাম, পানি ১১ গ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.২ মিলিগ্রাম, নায়াসিন বা ভিটামিন বি৩ ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৯ ৮২ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ৩.৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫৫৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৫০৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ২.৯ মিলিগ্রাম। ডাঁটাবীজের দানা সম্পূর্ণ গ্লুটেনিন মুক্ত। চালে গ্লুটেনিন আছে। যাদের গ্লুটেনিন অ্যালার্জি আছে তারা নিশ্চিন্তে ডাঁটার দানা দিয়ে ভাত রেঁধে বা এর ময়দা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেতে পারেন।
চাষাবাদ
দানাডাঁটার চাষ ডাঁটার মতোই। জমি চাষ দিয়ে সমতল করতে হবে। যেকোনো মাটিতেই এর চাষ করা যায়। তবে যেখানে পানি জমে না ও উর্বর, সেরূপ মাটিতে ভালো হয়। গম কাটার পর সে জমিতে দানা ডাঁটার চাষ করা যায়। যে জমিতে দানাডাঁটার চাষ করা হবে সে জমিতে দুই বছর পর আবার দানাডাঁটার চাষ করা উচিত হবে। এর মধ্যে সেই জমিতে সয়াবিন বা ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে।
বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করে তারপর মূল জমিতে সেসব চারা লাগাতে হবে। এর চারা ভুট্টা বা সয়াবিনের চারার মতো শক্ত নয়, বেশ নরম। তাই চারা তোলা ও লাগানোর কাজ খুব সাবধানে করতে হবে। প্রতি একর জমি চাষের জন্য ১ কেজি বীজ লাগবে। বীজ বোনার সময় হলো মার্চ-মে মাস। এর পরে বীজ বুনলে ফলন কমে। সারিতে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার। এর জন্য ভুট্টার মতো বেশি পরিমাণে ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার নেই। একরে মাত্র ২০ থকে ৪০ কেজি ইউরিয়া সার যথেষ্ট। চারা লাগানোর কয়েক দিন আগেই জমি চাষের সময় এই সার ছিটিয়ে দেয়া যায়।
ফসল কাটা ও সংরক্ষণ
অক্টোবরে ফসল পেকে গেলে ছড়া কেটে সংগ্রহ করতে হবে। উঠানে পলিথিন বিছিয়ে তাতে ছড়াগুলো বিছিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে পিটিয়ে বীজ ছাড়াতে হবে। ছেড়ে পরিষ্কার করে দানা আলাদা করে ড্রামে বা পলিথিনের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে। গুদামে রাখার সময় বীজে বা দানায় ১০-১২ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকা উচিত নয়।




কৃষি প্রতিবেদক \ গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়া-টাকিমারায় মেশিনের সাহায্যে আমন ধান রোপণ প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয়েছে। ওই ব্লাকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোল্লা হাফিজের তত্বাবধানে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের প্রদর্শনী প্লটে মেশিনের সাহায্যে ধান রোপণ করা হয়। স্থানীয় কৃষক আবেদ মন্ডলের ১০ কাঠা জমিতে এ প্রদর্শনী প্লট করা হয়। মেশিনের সাহায্যে ধান রোপনের সুফল, আর্থিক লাভ এবং সময় শাস্রয় সম্পর্কে উপস্থিত শতাধিক কৃষককে মাঠ প্রশিক্ষণ দেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোল্লা হাফিজ।


এস কে বাশার \ ২০১১ সাল ছিল পাটের বাজারে ধ্বস। ওই বছর পর্যাপ্ত পাট চাষ এবং ভাল ফলন হলেও ভাল বাজার মূল্য না পাবার কারণে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। এবছরেও বিড়ম্বিত ভাগ্য তাড়া করছে পাট চাষীদের। পাট বীজ বপন মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষীরা সেচ দিয়ে বীজ বপন করে। সেচ দেয়া হলেও প্রচন্ড খরতাপে পাটের বৃদ্ধি হয়নি স্বাভাবিক নিয়মে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাট হয়েছে ৬-৭ ফুট লম্বা। এর ব্যাতিক্রম এলাকার সংখ্যা খুবই কম। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে পাট বেড়ে ওঠে তরতর করে। কিন্তু এবছর চৈত্র থেকে আষাঢ়ের শেষভাগ গেছে বৃষ্টিহীন। আষাঢ়ের শেষ দশকে সামান্য বৃষ্টি হলেও তা পাটের বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়। আর এ কারনে পাটের গাছ হয়েছে ছোট, আবার আঁশও তেমন একটা হৃষ্টপুষ্ট হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে এবছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ হাজার ৪২ হেক্টর। বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭১০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ১০.৯৬ বেল হিসেবে জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৭ বেল। তবে এবছর চাষ বৃদ্ধি পাওয়া স্বত্বেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেনা বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গার কৃষক আব্দুল হাই বলেন, তিনি প্রতি বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে থাকেন। এবছরও চাষ করেছেন। প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ১০ মনের উপরে ফলন হলেও এবছর ৬-৭ মনের উপরে ফলন হবে না বলে জানান। মিরপুর উপজেলার কালিতলার কৃষক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যমত্ম সেচ দিয়ে পাট বপন করেছেন জৈষ্ট মাসের মাঝামাঝিতে। পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষে ৪ বার সেচ দিয়েছেন। তার পরেও পাট হয়েছে ৪ হাত লম্বা। ছাল হয়নি। এবছরেও সে পাট চাষে লোকসানের শিকার বলে জানান। এদিকে পাটের ভাল ফলনের আশা করছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়ার কৃষক আলাউদ্দিন মালিথা। তিনি বলেন, পিয়াজ তুলে জমিতে সেচ দিয়ে চৈত্র মাসে পাট বীজ বপন করেছিলেন। পরে আরো ৪ বার সেচ দিয়েছেন। খরচ বেশি হলেও তার পাট বেশ ভাল হয়েছে। আঁশও হয়েছে বেশ শক্ত। তিনি বিঘা প্রতি ৯-১০ মন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। আলাউদ্দিন মালিথা বলেন, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পেরেছেন তারা। একই এলাকার কৃষক আজমত মালিথা বলেন, এবছর পাট চাষের ব্যয় বেড়েছে গত বছরের তুলনায় এক হাজার টাকা। বীজ বপনের লক্ষ্যে জমি চাষ থেকে শুরু করে পাট বাজার জাত করা পর্যমত্ম তার বিঘা প্রতি ব্যয় হবে ১০ হাজার টাকা। স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে সর্বাধিক ব্যয় হতো ৯ হাজার টাকা। এই ব্যায়ের মধ্যে তার নিজের পারিশ্রমিক ধরা হয়নি বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় এবছর পাটের বাজার মূল্য প্রতি মন দেড় হাজার টাকার কম হলে এবছরও কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান, এতিমধ্যে জেলায় ১০ ভাগ পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাটের ফলন কিছুটা কম হবে। তবে এবছর পাটের বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে তিনি আশা করছেন।







