Saturday, July 28, 2012


বিড়ম্বনা কাটছে না কুষ্টিযার পাট চাষীদের

এস কে বাশার \ ২০১১ সাল ছিল পাটের বাজারে ধ্বস। ওই বছর পর্যাপ্ত পাট চাষ এবং ভাল ফলন হলেও ভাল বাজার মূল্য না পাবার কারণে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। এবছরেও বিড়ম্বিত ভাগ্য তাড়া করছে পাট চাষীদের। পাট বীজ বপন মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষীরা সেচ দিয়ে বীজ বপন করে। সেচ দেয়া হলেও প্রচন্ড খরতাপে পাটের বৃদ্ধি হয়নি স্বাভাবিক নিয়মে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাট হয়েছে ৬-৭ ফুট লম্বা। এর ব্যাতিক্রম এলাকার সংখ্যা খুবই কম। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে পাট বেড়ে ওঠে তরতর করে। কিন্তু এবছর চৈত্র থেকে আষাঢ়ের শেষভাগ গেছে বৃষ্টিহীন। আষাঢ়ের শেষ দশকে সামান্য বৃষ্টি হলেও তা পাটের বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়। আর এ কারনে পাটের গাছ হয়েছে ছোট, আবার আঁশও তেমন একটা হৃষ্টপুষ্ট হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে এবছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ হাজার ৪২ হেক্টর। বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭১০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ১০.৯৬ বেল হিসেবে জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৭ বেল। তবে এবছর চাষ বৃদ্ধি পাওয়া স্বত্বেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেনা বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গার কৃষক আব্দুল হাই বলেন, তিনি প্রতি বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে থাকেন। এবছরও চাষ করেছেন। প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ১০ মনের উপরে ফলন হলেও এবছর ৬-৭ মনের উপরে ফলন হবে না বলে জানান। মিরপুর উপজেলার কালিতলার কৃষক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যমত্ম সেচ দিয়ে পাট বপন করেছেন জৈষ্ট মাসের মাঝামাঝিতে। পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষে ৪ বার সেচ দিয়েছেন। তার পরেও পাট হয়েছে ৪ হাত লম্বা। ছাল হয়নি। এবছরেও সে পাট চাষে লোকসানের শিকার বলে জানান। এদিকে পাটের ভাল ফলনের আশা করছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়ার কৃষক আলাউদ্দিন মালিথা। তিনি বলেন, পিয়াজ তুলে জমিতে সেচ দিয়ে চৈত্র মাসে পাট বীজ বপন করেছিলেন। পরে আরো ৪ বার সেচ দিয়েছেন। খরচ বেশি হলেও তার পাট বেশ ভাল হয়েছে। আঁশও হয়েছে বেশ শক্ত। তিনি বিঘা প্রতি ৯-১০ মন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। আলাউদ্দিন মালিথা বলেন, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পেরেছেন তারা। একই এলাকার কৃষক আজমত মালিথা বলেন, এবছর পাট চাষের ব্যয় বেড়েছে গত বছরের তুলনায় এক হাজার টাকা। বীজ বপনের লক্ষ্যে জমি চাষ থেকে শুরু করে পাট বাজার জাত করা পর্যমত্ম তার বিঘা প্রতি ব্যয় হবে ১০ হাজার টাকা। স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে সর্বাধিক ব্যয় হতো ৯ হাজার টাকা। এই ব্যায়ের মধ্যে তার নিজের পারিশ্রমিক ধরা হয়নি বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় এবছর পাটের বাজার মূল্য প্রতি মন দেড় হাজার টাকার কম হলে এবছরও কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান, এতিমধ্যে জেলায় ১০ ভাগ পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাটের ফলন কিছুটা কম হবে। তবে এবছর পাটের বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

No comments:

Post a Comment