Saturday, July 14, 2012


খাল-বিলের তলায় বোরো ধান চাষ

মো: নোয়াখেরুল ইসলাম, কৃষিবিদ
বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের বেশির ভাগই আসে ধান থেকে, আর ধান উৎপাদনের বেশির ভাগ আসে বোরো ধান থেকে। বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার তথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার, কৃষিতে ভর্তুকি, উন্নত বীজ সরবরাহ ইত্যাদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যেহেতু কৃষি জমি ক্রমহ্রাসমান, তাই উল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাপক এলাকা খাল-বিলের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১১৪১৬১ হেক্টর জমি বিলের আওতায় রয়েছে এবং ছোট-বড় খালের তলায় অনেক চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এই ব্যাপক এলাকা রবি মওসুমে বেশির ভাগই পতিত থাকে এবং কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় বোরো ধান চাষ হয়ে থাকে। যদি এই এলাকাগুলো স্বল্পকালীন উফশী বোরো ধান চাষের আওতায় আনা যায় তবে সেই পতিত জমি থেকে বছরে প্রায় দুই লাখ টন বোরো ধান পাওয়া সম্ভব যা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
খাল-বিলের তলায় বোরো আবাদের জন্য কৃষকেরা কোনো যতœ ছাড়াই শুধু প্রাকৃতিক অনুদানে ফসল উৎপাদন করে থাকে, কিন্তু যদি সামান্য যতœ নেয়া যায় তবে ধানের সন্তোষজনক একটা ফলন পাওয়া সম্ভব। বিলের তলার মাটি পলি ও হিউমাসসমৃদ্ধ থাকায় মুখ্য পুষ্টি উপাদান ব্যবহার না করলেও চলে। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় জলমগ্ন থাকে বিধায় এসব জমি প্রকৃতিগতভাবে সালফার ও দস্তা উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের কারণে বিলের তলায় চাষকৃত বোরো ধান অনেক সময় ঝড়ো বাতাস বা বৃষ্টিতে নুয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে পরিমাণমতো পটাশ সার ব্যবহার করলে নুয়ে পড়া কমে এবং রোগ-পোকা কম হয়। সালফার এবং দস্তার ঘাটতির জন্য বিঘাপ্রতি ১০ কেজি জিপসাম এবং এক কেজি দস্তা সার ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রেখে ওই তিনটি পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করে বিলের তলা আবাদ করে ধানের ফলন অনেক বাড়ানো সম্ভব।

No comments:

Post a Comment