Tuesday, July 31, 2012



পেয়ারার ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ! ফল ধরবে বারো মাস!

image_103_39321
ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ। তা ছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বারো মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায়্র আট থেকে দশগুণ বেশি ফল ধরবে গাছে। পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে এই তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত বর্ষা ও শীত_এই দুই ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয় ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তা ছাড়া জলীয় ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে। ফলের আকৃতি এবং রং সব দিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কিভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে 'গাছের ডাল বাঁকানো' পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি।
এ প্রযুক্তির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু কালের কণ্ঠকে বলেন, বছরে দুবার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-জুন) এবং হেমন্তকালে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব। ডাল বাঁকানোর ১০-১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেঁটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি কাণ্ডের সঙ্গে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল এক সেন্টিমিটার লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগে।
শামসুল আলম আরো বলেন, ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। তবে এ সময় টানা বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়া ফলন বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই অত্যধিক হারে ফলন পাওয়া যায়। তা ছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রং ও আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজারদরও বেশি পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ড. রহিম বলেন, এখন পর্যন্ত শুধু পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রেই এ গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। তবে অন্য ফলের ক্ষেত্রেও গবেষণা চলছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গ্রীষ্মকালে গাছপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং হেমন্তকালে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ কেজি পেয়ারার ফলন পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি। তিনি বলেন, কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করে উৎপাদন বাড়াতে পারবেন, যা বাউকুলের মতো পেয়ারাকেও মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলবে।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতি মাটিবিহীন চাষাবাদ

195881_1
গাছ আছে, ফল আছে, ফুল আছে আপনার প্রিয় আঙিনায়; কিন্তু গাছের নীচে মাটি নেই। ভাবছেন এটা আবার হয় নাকি! হয়। আপনার আঙিনায় মাটি ছাড়াই জন্মাবে প্রিয় ফসল, ফুল, সবজি। মাটির পরিবর্তে পানিতেই জন্মাতে পারবেন টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, ক্ষিরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা আরো অনেক ফসল। মাটিবিহীন পানিতে ফসল উৎপাদনের এই কৌশলকে বলে হাইড্রোপনিক যা একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। এই চাষাবাদে কোনো কীটনাশক বা আগাছানাশক কিংবা অতিরিক্ত সার দেয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই অনায়াসে গড়ে তুলতে পারবেন অর্গানিক ফসলের সম্ভার। সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) -এর বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিতে চাষাবাদ শুরম্ন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.কে. এম. সেলিক রেজা মলিস্নক ১৯৯৭ সালে জাপানে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রযুক্তি প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ২০০৬ সালে। ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির গবেষণা শুরম্ন করেন টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস ও স্ট্রবেরি এই ৪টি ফসল নিয়ে। এ গবেষণায় সাফল্যের পর ২০০৮ সালে এর সাথে ক্ষিরা, শসা, গাঁদা ফুল ও বেগুন এবং ২০০৯ সালে বামন সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, চন্দ্রমলিস্নকা যোগ করেন। বিজ্ঞানী মলিস্নক এ গবেষণায় ব্যাপকভাবে সাফল্য পান।
তিনি জানান, লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নেই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। উন্নত বিশ্বের যেমন : ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত সবজি ও ফলে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না বিধায় এ সবজি ও ফল নিরাপদ এবং অধিক বাজারমূল্য পাওয়া যায়।
সাধারণত দু'ভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। সঞ্চালন পদ্ধতি এবং সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি।
সঞ্চালন পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অনত্মতপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পামপ এবং পাইপের আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধুমাত্র রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যায়। এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজিং লোহার ট্রের উপর কর্কশিটের মাঝে গাছের প্রয়োজনীয় দূরত্ব অনুসারে যেমন_ লেটুস ২০ দ্ধ ২০ সে. মি. টমেটো ৫০ দ্ধ ৪০ সে. মি. এবং স্ট্রবেরি ৩০ দ্ধ ৩০ সে. মি. দূরত্বে গর্ত করতে হয়। উপযুক্ত বয়সের চারা স্পঞ্জসহ ওই গর্তে স্থাপন করতে হয়। অপরদিকে, সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল চাষ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোনো পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও তার উপর স্থাপিত কর্কশিটের মাঝে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। কর্কশিটের উপরে ৪ থেকে ৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশিটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকার ভেদে সাধারণত ২ থেকে ৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে পস্নাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।
যে সকল ফসল হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যাবে তা হল_ পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে লেটুস, গীমাকলমি, বিলাতি ধনিয়া, বাঁধাকপি। ফল জাতীয় সবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, শসা, ক্ষিরা, মেলন, স্কোয়াস, ফল স্ট্রবেরি, ফুল এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা, জারবেরা ইত্যাদি। হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চারা উৎপাদন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী মলিস্নক বলেন, হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ বস্নক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্পঞ্জকে ৩০ সে. দ্ধ ৩০ সে. সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সে মি. দৈঘর্্য এবং ২.৫ সে. মি. প্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে এক সে. মি. করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জের মধ্যে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে একটি ছোট ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫ থেকে ৮ সে. মি. পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জটি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২ থেকে ৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫ থেকে ১০ মি. লি. খাদ্য উপাদানে সম্বলিত দ্রবণ এক বার এবং চারা গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর থেকে চারা রোপণের পূর্ব পর্যনত্ম প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ মি. লি. দ্রবণ দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে চারা রোপণের পর দ্রবণের পিএইচ মাত্রা ৫.৮ থেকে ৬.৫ -এর মধ্যে এবং ইসি মাত্রা ১.৫ থেকে ১.৯ -এর মধ্যে রাখা দরকার। গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে ওপর থেকে সুতা বা শক্ত রশি ঝুলিয়ে গাছ সোজা ও দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় এবং পরিচর্যা সাধারণ গাছের মতই করতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির জন্য রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ ও তৈরির প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন রকম। প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট ২৭০ গ্রাম, পটাসিয়াম নাইট্রেট ৫৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এক হাজার গ্রাম, ম্যাগানেসিয়াম সালফেট ৫১০ গ্রাম, ইডিটিএ আয়রন ৮০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ৬.১০ গ্রাম, বরিক এসিড ১.৮০ গ্রাম, কপার সালফেট ০.৪০ গ্রাম, অ্যামনিয়াম মলিবটেড ০.৩৮ গ্রাম, জিংক সালফেট ০.৪৪ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে খাদ্য দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরির সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ তৈরি করতে হবে। এই ঝঃড়পশ তৈরি করার সময় ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং ঊউঞঅ ওৎড়হ কে পরিমাপ করে ১০ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে দ্রবণকে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "অ" নামে নামকরণ করতে হবে। অবশিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যগুলোকে একসাথে ১০ লিটার পাানিতে দ্রবীভূত করে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ইচ্ নামে নামকরণ করতে হবে। এক হাজার লিটার জলীয় দ্রবণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে এক হাজার লিটার পানি ট্যাংকে নিতে হবে। তারপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ অ থেকে ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকের পানিতে ঢালতে হবে এবং একটি অ-ধাতব দ-ের সাহায্যে নাড়াচাড়া করে ভালভাবে মেশাতে হবে। এরপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ই" থেকে আগের মত ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকে নিতে হবে এবং আগের মতই অ-ধাতব দ-ের সাহয্যে পানিতে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ গুলি সমানভাবে মেশাতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চাষাবাদের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আব্দুল হক জানান, এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারাবছর কিংবা অমৌসুমেও সবজি, ফল, ফুল চাষাবাদ করা যায়। পদ্ধতিটি মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটিবাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না। কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্যসন্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। এটি হোম-ফার্মিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে দেশে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পূরণের লৰ্যে শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করা যাবে না। দেশের এমনি অবস্থায় প্রয়োজন অব্যবহৃত খালি জায়গা ও পতিত জায়গা শস্য চাষের আওতায় আনা। হাইড্রোপনিকস চাষ পদ্ধতি এ ৰেত্রে সঠিকভাবে আরোপযোগ্য একটি কৌশল। এ পদ্ধতি বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, বারান্দায় কিংবা চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। এতে করে একদিকে যেমন পতিত জমি বা অব্যবহৃত জায়গার সফল ব্যবহার হবে, অন্যদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে।
লেখক : কৃষিবিদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকতর্াফল গবেষণা কেন্দ্র, বিনোদপুর, রাজশাহী

Sunday, July 29, 2012


মনিরামপুরে শসা’র বাম্পার ফলন

লেখক: মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা  |  রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১২, ১৪ শ্রাবণ ১৪১৯
Details
লাভ বেশি হওয়ায় শসা চাষের দিকে ঝুঁকছে মনিরামপুরের চাষীরা। উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মাঠের পর মাঠ শসা ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। চাষীদের পরিচর্যায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ শসা চাষের সাথে জড়িত। এ এলাকার জলবায়ু, মাটি, পানি এ জাতীয় সবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে দেশি ও হাইব্রিড জাতের দু’প্রকার শসা চাষ হয়ে থাকে। চাষীরা জানান, হাইব্রিড জাতের শসাটি বীজ বপনের পর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল আসে। বছরের জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে এর আবাদ শুরু হয়। হাইব্রিড জাতের শসা ভাদ্র মাস পর্যন্ত এবং দেশি জাতের শসা আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত ফল দেয়। অপেক্ষাকৃত দেশি জাতের ধরন কম কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ফল তোলা যায়। অপরদিকে হাইব্রিড জাতের শসা ফলন বেশি কিন্তু মাত্র ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ফল দেয়। তবে এ এলাকায় হাইব্রিড জাতের শসার বেশি চাষ হয়ে থাকে। দামের দিক দিয়ে দেশিটি ও হাইব্রীড একই হলেও ওজনে দেশী জাতের শসা কম লাগে। প্রতি মণ শসা সাড়ে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের ডাঙ্গির মাঠটি শসার মাঠ হিসেবে পরিচিত। এ মাঠের একটুকুও জমি খালি নেই। শুধু শসার ক্ষেত। সরেজমিন প্রান্তিক চাষী আলমগীর হোসেন (৩০) জানান, চলতি মৌসুমে নিজের এবং অন্যের জমি লীজ নিয়ে গত জ্যৈষ্ঠ মাসে ইউনাইটেড সীডস’র হাইব্রিড জাতের শসার আবাদ করেছি। জমি লীজ ছাড়া বিঘা প্রতি মোট খরচ হবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার শসা বিক্রি হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।
শামকুড় গ্রামের আশেপাশের পানিছত্র, ঘিবা, লাউড়িসহ কয়েকটি গ্রামেও শসা চাষ শুরু হয়েছে। শ্যামকুড় গ্রামের কামরুজ্জামান, নাজমুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, রবিউল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, নওয়াব আলীসহ শসা চাষীরা জানান, ফসল তুলে তা স্থানীয় মনিরামপুর, কেশবপুর, নওয়াপাড়াসহ যশোরের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আবার অনেক চাষী ক্ষেত থেকেই পাইকারী ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করে থাকেন। মূলত এখানকার উত্পাদিত শসা খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।



আবদুল্লাহ আল মারুফ, পাংশা
চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। তবে বাজার দর নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পাট চাষিরা। এবারের মৌসুমে পাট মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা সহযোগিতা প্রদান করলেও বাজার দর নিয়ে উৎকণ্ঠা কাটছে না পাট চাষিদের। সম্প্রতি উপজেলার প্রায় সব এলাকায়ই পাট কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পাংশা উপজেলায় ব্যাপক হারে পাট চাষ হয়েছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৮ হাজার হেক্টর। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাট চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২২০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পাট চাষ কিছুটা কম হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১১ হাজার হেক্টর। 
উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মর্কর্তা আজিম-উল-ইসলাম বলেন, পাংশা উপজেলায় চলতি মৌসুমে সোনালি অাঁশ পাটের উৎপাদন বাড়াতে পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা সহযোগিতা প্রদান চাষিদের অনেকটাই উদ্বুদ্ধ করেছে। উফশী পাট ও পাট বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর, মৌরাট, শরিষা ও বাবুপাড়াসহ ৫টি ইউনিয়নের ২০০ করে ১ হাজার পাট চাষিকে বিনামূল্যে সার ও কীটনাশক প্রদান করা হয়েছে। এদের প্রত্যেককে ১২ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি পটাশ, ৫ কেজি টিএসপি এবং বোতল করে কীটনাশক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া মৌসুমের শুরুতে এসব চাষিকে মাথাপিছু ২.৩ কেজি পাট বীজ প্রদান করা হয়েছিল।
পাট চাষি জয়নাল বিশ্বাস, আনছার আলী, মনছুর শেখ, শহিদ শেখ জানান, সম্প্রতি কিছু পাট কেটে বাজারে বিক্রি করেছেন তারা। বর্তমানে পাটের বাজার দর ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে তারা আশঙ্কা করছেন বাজারে পাট আমদানি বেড়ে গেলে দাম কমে যেতে পারে। এতে কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাটের বর্তমান বাজার ধরে রাখা গেলে হয়তো গত বছর পাট চাষ করে কৃষক যে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিলেন এবার পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানান, সিন্ডিকেট তৈরি করে কোনো অপশক্তি যাতে পাটের বর্তমান বাজারে ধস নামাতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম আহম্মেদ জানান, গত বছর পাটের বাজার দর কিছুটা কম হলেও পাটকাঠির ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক এবারো পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তবে খাল, বিল, ডোবা, নালাসহ ছোট ছোট পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া ও নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় চাষিরা পাট পচানোর জায়গা না পাওয়ায় পাট চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ জলাশয় মাছ চাষের আওতায় চলে আসায় দিনের পর দিন পাট চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষকন। পাটের বাজার দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে পাটের আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। আশা করছি চলতি বছর তারা পাট এবং পাটকাঠি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
এদিকে চাটমোহর প্রতিনিধি জাাঙ্গীর আলম জানান, পাটকে সোনালি অাঁশ বলা হলেও পাটের সোনালি দিন নেই বললেই চলে। এমনটাই মনে করছেন পাবনার চাটমোহরের পাট চাষিরা। তবুও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় পাটের চাষাবাদ করেছেন। কয়েক সপ্তাহ হল চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু চাষিদের মুখে হাসি নেই। কারণ ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। চলতি বছর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা। তবে বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের ১ হাজার হেক্টর জমির পাট তলিয়ে গেছে। চাটমোহর উপজেলার নতুনবাজার, রেলবাজার, মূলগ্রাম, মথুরাপুর, মির্জাপুর, পার্শ্বাডাঙ্গা, হরিপুরহাটসহ বিভিন্ন হাটে গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।
চাটমোহরের বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, ভালোমানের পাট মণ প্রতি ২ হাজার টাকা ও নিম্নমানের পাট ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে চাষিরা সংশয় প্রকাশ করছেন। বর্তমান বাজারে পাটের যে দাম রয়েছে তা যদি মৌসুমের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকে তা হলে চাষিদের কোনো কষ্ট থাকবে না। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছরো মাঝ পথে এসে পাটের বাজারে দরপতন ঘটতে পারে বলে চাষিদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চাটমোহর অমৃতকু-া (রেলবাজার) হাটে পাট বিক্রি করতে আসা পাট চাষি মাহাতাব ম-ল ও সেকেন্দার মোল্লা বলেন, এ বছরের প্রথমেই পাটের যে দাম পাচ্ছি তা নিয়ে আমরা খুশি। তবে গত বছরের মতো পাটের বাজার দরপতন হওয়া নিয়েও আমরা চিন্তিত। বিশিষ্ট ঠিকাদার ও পাট ব্যবসায়ী আলহাজ মো. আবদুল কুদ্দুস সরকার বলেন, ??প্রথম দিকেই পাটের মিলগুলো থেকে যে দাম পাচ্ছি সে দাম দিয়েই পাট কেনায় চাষিরা সন্তুষ্ট। তবে পরে মিলগুলো থেকে পাটের মূল্য কমিয়ে দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রওশন আলম জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ পাট চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দামও বেশি। পাটজাত পণ্যের কারখানার সংখ্যা এবং রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা এখন অন্য ফসলের তুলনায় পাট চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন।



এস এস সাগর, চিতলমারী
বাগেরহাটের চিতলমারীর চাষিরা সবজি চাষে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। এ বছর উপজেলায় বিভিন্ন প্রকার তরকারির বাম্পার ফলন হয়েছে। ঢাকা, খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায় এ অঞ্চলের সবজি চাষিরা। কিন্তু কৃষকেরা নায্যমূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কৃষি সংশিষ্ট অভিজ্ঞমহল জানিয়েছেন বর্তমানে চাষিরা ফসলের উৎপাদন খরচই ঘরে তুলতে পারছে না। সিডর ও আইলা পরবর্তীতে এ অঞ্চলের চাষিরা দেনায় দেনায় জর্জারিত। তাই অবিলম্বে সরকারি পদক্ষেপ বা সঠিক ভাবে বাজার মনিটরিং না করলে কৃষকরা সবজি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। 
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে চিতলমারীতে ১৪৫ হেক্টর জমিতে করলা, ৮৫ হেক্টরে শসা, ঢেঁড়শ ৫ হেক্টের, চাল কুমড়া ১৫ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ১০ হেক্টর, বেগুন ২৫ হেক্টর, বরবটি ৫ হেক্টর, লাউ ৫ হেক্টর এবং ৫ হেক্টর জমিতে পুঁইশাকের চাষ হয়েছে। তবে বেসরকারি পরিসংখানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কৃষক সবজি চাষ করেছে। উপজেলার খাশেরহাট, শ্রীরামপুর, বাখেরগঞ্জ, কুরমনি, সুরশাইল, শৈলদাহ, কালিগঞ্জ, হিজলা নালুয়া, বড়বাড়িয়া ও ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ঘেরের ওপর তরকারি যেন উপচে পড়ছে। প্রতিদিনই এসব প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ট্রাক ভরে তরকারি কিনতে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারনে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা কৃষকেরা। অন্যদিকে ফড়িয়াদের নির্যাতন তো রয়েছে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন সবজির গালা (আড়ৎ) ঘুরে জানা গেছে, প্রতি মন করল্লা ২০০-৩০০ টাকা, শসা ২৫০-৩২০ টাকা, বরবটি, ৫০০ টাকা, পুঁইশাক ১২০ টাকা, বেগুন ৫০০-৭০০ টাকা, কুশি ৪০০-৫০০ টাকা এবং ঝিঙ্গা ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ফড়িয়া ও দালালরা জোর করেই চাষিদের সবজির দাম কম দিয়েছে বলে রাশমহন ম-ল, সদাই ম-ল, অবনী বাড়ইসহ অসংখ্য চাষি অভিযোগ করেন। 
খড়মখালী গ্রামের সবজি চাষি আলমগীর তরফদার, কৃষক সুধাংশু ম-ল, দেবেন ম-ল, কুড়ালতলার অনাদী বিশ্বাস, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, দড়িউমাজুড়ি গ্রামের সুধান্ন ঘরামীসহ অসংখ্য চাষি অভিন্ন সুরে জানান, স্থানীয় ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রেহাই এবং উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণের পরিধি বাড়িয়ে ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে। তা নাহলে কৃষকেরা সবজি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

Saturday, July 28, 2012


বিড়ম্বনা কাটছে না কুষ্টিযার পাট চাষীদের

এস কে বাশার \ ২০১১ সাল ছিল পাটের বাজারে ধ্বস। ওই বছর পর্যাপ্ত পাট চাষ এবং ভাল ফলন হলেও ভাল বাজার মূল্য না পাবার কারণে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। এবছরেও বিড়ম্বিত ভাগ্য তাড়া করছে পাট চাষীদের। পাট বীজ বপন মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষীরা সেচ দিয়ে বীজ বপন করে। সেচ দেয়া হলেও প্রচন্ড খরতাপে পাটের বৃদ্ধি হয়নি স্বাভাবিক নিয়মে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাট হয়েছে ৬-৭ ফুট লম্বা। এর ব্যাতিক্রম এলাকার সংখ্যা খুবই কম। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে পাট বেড়ে ওঠে তরতর করে। কিন্তু এবছর চৈত্র থেকে আষাঢ়ের শেষভাগ গেছে বৃষ্টিহীন। আষাঢ়ের শেষ দশকে সামান্য বৃষ্টি হলেও তা পাটের বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়। আর এ কারনে পাটের গাছ হয়েছে ছোট, আবার আঁশও তেমন একটা হৃষ্টপুষ্ট হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে এবছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ হাজার ৪২ হেক্টর। বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭১০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ১০.৯৬ বেল হিসেবে জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৭ বেল। তবে এবছর চাষ বৃদ্ধি পাওয়া স্বত্বেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবেনা বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গার কৃষক আব্দুল হাই বলেন, তিনি প্রতি বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে থাকেন। এবছরও চাষ করেছেন। প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ১০ মনের উপরে ফলন হলেও এবছর ৬-৭ মনের উপরে ফলন হবে না বলে জানান। মিরপুর উপজেলার কালিতলার কৃষক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যমত্ম সেচ দিয়ে পাট বপন করেছেন জৈষ্ট মাসের মাঝামাঝিতে। পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষে ৪ বার সেচ দিয়েছেন। তার পরেও পাট হয়েছে ৪ হাত লম্বা। ছাল হয়নি। এবছরেও সে পাট চাষে লোকসানের শিকার বলে জানান। এদিকে পাটের ভাল ফলনের আশা করছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়ার কৃষক আলাউদ্দিন মালিথা। তিনি বলেন, পিয়াজ তুলে জমিতে সেচ দিয়ে চৈত্র মাসে পাট বীজ বপন করেছিলেন। পরে আরো ৪ বার সেচ দিয়েছেন। খরচ বেশি হলেও তার পাট বেশ ভাল হয়েছে। আঁশও হয়েছে বেশ শক্ত। তিনি বিঘা প্রতি ৯-১০ মন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। আলাউদ্দিন মালিথা বলেন, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পেরেছেন তারা। একই এলাকার কৃষক আজমত মালিথা বলেন, এবছর পাট চাষের ব্যয় বেড়েছে গত বছরের তুলনায় এক হাজার টাকা। বীজ বপনের লক্ষ্যে জমি চাষ থেকে শুরু করে পাট বাজার জাত করা পর্যমত্ম তার বিঘা প্রতি ব্যয় হবে ১০ হাজার টাকা। স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে সর্বাধিক ব্যয় হতো ৯ হাজার টাকা। এই ব্যায়ের মধ্যে তার নিজের পারিশ্রমিক ধরা হয়নি বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় এবছর পাটের বাজার মূল্য প্রতি মন দেড় হাজার টাকার কম হলে এবছরও কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান, এতিমধ্যে জেলায় ১০ ভাগ পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাটের ফলন কিছুটা কম হবে। তবে এবছর পাটের বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

Friday, July 27, 2012



পাইকগাছা প্রতিনিধি
খুলনার পাইকগাছার নুনিয়াপাড়া গ্রামের এক কলা গাছে ২০টি মোচা ধরায় প্রতিদিন উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে একনজর দেখার জন্য। উপজেলার সোলাদানা ইউপির সদস্য পরিতোষ ম-ল বলেন, কয়েকদিন আগে তার এক কলাগাছে অনেকগুলো কলার মোচা দেখা যায়। তখন ভালোভাবে না দেখলেও পরে অনেকে দেখে জানায় গাছে ২০টি মোচা হয়েছে এবং আরো কয়েকটি মোচা বড় হওয়ার অপেক্ষায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন উৎসুক জনতা একনজর এতগুলি মোচা দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে। এলাকার প্রবীণব্যক্তিত্ব মনোহর চন্দ্র ম-ল বলেন শুনেছি এক গাছে ১০-১২টা মোচা হয় কিন্তু ২০টিরও অধিক হতে পারে তা আমার জানা ছিল না। এই প্রথম দেখলাম।

Thursday, July 26, 2012



চাঁদপুর প্রতিনিধি
দুবছর পরও চাঁদপুরে পুকুরে ইলিশ চাষের গবেষণার সফলতা নিয়ে সন্ধিহান ইলিশ গবেষকরা। তবে গ্রোথ কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ কখনোই সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে আশঙ্কা খোদ গবেষকদের। কিন্তু তারা আরো ১ বছর গবেষণার পর পুকুরে ইলিশ চাষ সম্ভব কতটুকু তা সাফ জানিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে ৩টি পুকুরের মধ্যে ২টি পুকুরে কোনো ইলিশ এখন নেই বলে একটি সূত্রের দাবি। শুধুমাত্র একটি পুকুরে ইলিশ চাষ হলেও তীব্র গরমের কারণে ওই পুকুরের অর্ধশত ইলিশ ইতিমধ্যে মরে গেছে বলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানিয়েছেন। মরে যাওয়া ইলিশগুলোর মধ্যে কিছু ইলিশ ফরমালিন দিয়ে ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরিতে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পুকুরে ইলিশ চাষ গবেষণার ব্যর্থতার ২২ বছর পর ২০১০ সালের ১৩ মে নতুনভাবে পুকুরে পোনা ছেড়ে ইলিশ চাষ গবেষণায় আবারো নামেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বিশেষজ্ঞরা। যদিও তারা এই গবেষণা ১ জুলাই ২০১০ থেকে কাগজে কলমে শুরু দেখিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে নদী কেন্দ্রের ৩টি পুকুরে মেঘনা নদী থেকে ইলিশের পোনা ৬/১০ গ্রামের ৯০০ জাটকা ছাড়া হয়। এসব পুকুরের মধ্যে ৬০০ ফুট গভীরতার পুকুরে ৩০০ জাটকা, ৮০০ ফুট গভীরতার পুকুরে ৩০০ জাটকা এবং ১০ ফুট গভীরতার পুকুরে ৩০০ জাটকা ছাড়া হয়েছে বলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন। 
তবে একটি সূত্র জানায়, নদী থেকে বার বার পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়লেও বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে পড়তো। ১ম দুটি পুকুরের গভীরতার কম হওয়ায় ইলিশের জাটকা কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে ওই সূত্রের দাবি। তবে ১০ ফুট গভীরতার পুকুরে ছাড়া জাটকার গ্রোথ গত ২ বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের হলেও পানির গভীরতা ও স্রোত ধারা না থাকায় এসব ইলিশের গ্রোথ দিন দিন কমতে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তবে এসব ইলিশেও ডিম আসে পরিপক্ক না হতেই। এক কথায় ১ বছরে নদীতে যে ইলিশ পরিপক্ক হয় আর সেই ইলিশ পুকুরে ৩ বছরে পরিপক্ক হয়ে উঠতে পারে না। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্রের চাঁদপুরের ইলিশ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদ ও ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, পুকুরে ইলিশ চাষ খুবই ব্যয় বহুল হবে। কারণ ইলিশের পোনা সংগ্রহ করে তা পুকুরে এনে ছাড়া খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। এটা শুধু সম্ভব নদীর তীরের পুকুরগুলোত চাষ করা তবে সেখানে স্রোত ধারা বা লবণাক্ত পানির সংস্পর্শ থাকতে হবে। এছাড়াও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষ করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা আরো এক বছর পরীক্ষার পর পুকুরে ইলিশ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হবে বলে তারা জানান।

Wednesday, July 25, 2012


কৃষ্টিয়ায় আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার হেক্টর

চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২.৩২ লাখ মেট্টিক টন

এস কে বাশার \ চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৪৩ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩২ হাজার ৯০ মেট্টিক টন (চাল)। এবছর কুষ্টিয়ায় উফশি আমন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩২৩ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের আম,ন চাষ লক্ষ্যমাত্রা ৭২০ হেক্টর। হেক্টরপ্রতি ২.৭২ মেট্টিক টন হিসেবে উফশি চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ১৪৪ মেট্টিক টন এবং স্থানীয় জাতের হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১.৫৯ মেট্টিক টন। এতে ১১৪৬ মেট্টিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। উল্লিখিত পরিমান জমিতে আমন ধান চাষ সম্পন্ন করতে জেলায় এবছর বীজতলা করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৬ হেক্টর। কৃষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানাগেছে জেলায় ইতিমধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ সম্পন্ন হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লুৎফর রহমান জানান, এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হলেও আবহাওয়া আমন চাষের অনুকুলে রয়েছে। এছাড়া গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প থেকে সারা বছরই পানি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য ভূগর্ভস্থ সত্মরে পানির লেয়ার রয়েছে স্বাভাবিক। যে সব অঞ্চলে জিকে সেচ ক্যানেল রয়েছে ওই সব এলাকায় কৃষকরা সহজেই আমন চাষ করতে পারছেন। এছাড়া যেসব এলাকায় জিকে সেচ ব্যবস্থা নেই ওই এলাকার কৃষকরা সেচ দিয়ে আমন চাষ করছেন। উপ-পরিচালক বলেন এখন আমন রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। এবছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল-টাকিমারার কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে ধানের বজার মূল্য কম গেছে। এজন্য অনেকেই আউশ চাষ থেকে বিরত ছিল। কিন্তু জমি ফেলে রেখেতো লাভ নেই। এজন্য অনেক আউশের জমিতেও আমন ধান রোপণ করা হচ্ছে। এবছর আমন চাষ বৃদ্ধি পাবার আশা করছেন কৃষকরাও।

পেঁপের নতুন জাত উদ্ভাবন


ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. এমএ খালেক মিয়া। খুব শিগগিরই তিনি নতুন জাতের পেঁপে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পেঁপের নতুন এ জাতটি নিয়ে গবেষণায় গবেষণা সহযোগী হিসেবে ছিলেন ড. নাসরিন আকতার আইভিসহ আরো অনেকে।

পেঁপের নতুন এ জাতটি বাজারে আসার আগেই কৃষিবিজ্ঞানীদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রচলিত জাতগুলোতে কয়েক রকমের গাছ থাকে। যেমন পুরুষ উদ্ভিদ, স্ত্রী উদ্ভিদ ও উভলিঙ্গ উদ্ভিদ। পুরুষ উদ্ভিদে কোনো ফল ধরে না। আবার শুধু স্ত্রী উদ্ভিদ লাগালেও কোনো ফল আসে না। একটি স্ত্রী উদ্ভিদে ফল আসার জন্য পাশাপাশি অবশ্যই একটি পুরুষ উদ্ভিদ থাকতে হবে। অথবা ওই উদ্ভিদে উভলিঙ্গ ফুল থাকতে হবে। যার ফলে অনেক চারা লাগালে মাত্র গুটিকয়েক গাছে ফল দেখা যায়। আবার কখনো কখনো দেখা যায় পুরুষ উদ্ভিদের অভাবে কোনো গাছেই ফল ধরে না। তাই জিনতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ খালেক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছিলেন, কীভাবে পুরুষ উদ্ভিদ ছাড়াই পেঁপে পাওয়া সম্ভব। অনেক পরিশ্রমের পর এ গবেষণায় তিনি সফল হয়েছেন। সমপ্রতি তাঁর গবেষণার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এমন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন যেখানে শুধু উভলিঙ্গ উদ্ভিদ এবং স্ত্রী উদ্ভিদই আছে। কোনো পুরুষ উদ্ভিদ নেই। নতুন এই জাতে কোনো গাছ ফলহীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর এ রকম একটি পেঁপের জাত বাংলাদেশে তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করছেন। নতুন এ জাতটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরোপ করে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম রসুল বলেন, যেহেতু পেঁপে একই সাথে একটি ফল ও সবজি হিসেবে বহুল ব্যবহূত, তাই নতুন এ জাতটি দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা মেটানোয় যেমন অবদান রাখবে তেমনি লাভবান হবেন কৃষকরা।

Monday, July 23, 2012



ছাদ বাগানে জামরুল চাষ


আরনেট নিউজ : হঠাৎ করে কিনে শাড়ি-জামা পরা যায়, গাছ লাগানো যায় না। লাগানোর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভাবতে হয়, সে অনুযায়ী গর্ত করে গর্তে সার-মাটি ভরে রাখতে হয়। ছাদে বাগান এখন অনেকেই করছেন। তথ্য মতে, ঢাকায় প্রায় দেড় হাজার ছাদ বাগান রয়েছে। সেসব বাগানে নানা রকম ফল, ফুল ও বাহারি গাছ শোভা পাচ্ছে। তবে ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। বাজার থেকে যেসব ফল কিনছেন তা নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো, যে সবজি কিনছেন তাতে পোকা মারার বিষ দেয়া। তাই ওতে স্বাস্খ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া ফল ও সবজি গাছ থেকে তোলার পরই তার ভিটামিন কমতে থাকে। তাই বিষমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পেতে হলে নিজের আঙিনাতেই একটা ছোট্ট বাগান গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে কোথাও ফাঁকা জায়গা না থাকলে খোলা ছাদটাকে এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তাই ঝটপট পরিকল্পনা করে ফেলুন, এবার ছাদে কী কী গাছ লাগাবেন। ছাদে ভালো হয় এমন ফলের মধ্যে নানা জাতের জামরুল, করমচা, পেয়ারা, কাগজী লেবু, আম্রপালি আম, বারি আম ৪, ডালিম, কামরাঙ্গা, হাইব্রিড জলপাই, বাউকুল ও আপেল কুল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি অন্যতম। এ বছর না হয় এ ১০টি ফল দিয়েই শুরু করুন আপনার ছাদে ফলবাগানের যাত্রা। শুরুটা হোক নানা জাতের রূপবতী জামরুল দিয়ে।
জামরুলের আদি বাসভূমি আন্দামান-নিকোবর হলেও এখন আমাদের দেশী ফলে পরিণত হয়েছে। কাঁচাপাকা সব অবস্খাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।
সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।
জাত বাছাই দেশী জামরুল:
ফল আকারে ছোট, স্বাদে পানসে। তবে ফল ঝরে কম। দেশী জাতের জামরুলের বেশ কয়েক রঙের জামরুল দেখা যায়। লাল, গোলাপি, গোলাপি সবুজ ইত্যাদি রঙে দেশী জামরুলের কয়েকটি রকম আছে। গাছ বড় হওয়ায় ছাদে না লাগানোই ভালো।
থাই জামরুল:
থাই ভাষায় ছেম ফু পা, ফিলিপাইনে টামবিস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জামবু এয়ার নামের জামরুল বাংলাদেশে এসে হয়েছে থাই জামরুল। এ দেশে এখন কয়েক জাতের থাই জামরুল দেখা যাচ্ছে। এক জাতের থাই জামরুলের রঙ মোমের মতো সাদা, কিন্ত মুখের কাছে গোলাপি আভা। অন্য এক জাতের থাই জামরুলের রঙ সবুজাভ সাদা, অন্যটির রঙ দুধের মতো সাদা। আবার আরেক জাত আছে যেটার ফলের ওপর সাদা লম্বালম্বিভাবে গোলাপি আঁচড় আছে। আবার বড় লাল ফলও রয়েছে থাই জামরুলের। আছে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকার। লাল রঙের থাই জামরুলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব জাতের সেরা বড় আকারে সাদা রঙের মিষ্টি থাই জামরুল। দশটিতে কেজি হয়। স্বাদে বেশ রসাল, নরম। গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফল ধরতে শুরু কর্ বর্ষাতেও ফল ধরে। বছরে দু-তিন দফায় ফল ধরে। তবে বর্ষার জামরুলের স্বাদ কম হয়। ফল গাছে বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ও পচতে শুরু করে। বেশি বৃষ্টিতেও থাই জামরুলের ক্ষতি হয়।
রোজ অ্যাপেল:
থাই জামরুলের মধ্যে ‘রোজ আপেল’ সেরা। বছরে দু’বার ফল ধরে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একবার, এপ্রিল-মে মাসে আরেকবার। ফল আকারে খুব বড়। পাঁচ-ছ’টা জামরুলে এক কেজি হয়। ভেতরে পুরোটাই শাঁস। অত্যধিক মিষ্টি, শাঁসে চিনি বা সুগারের পরিমাণ প্রায় ২৫%। রঙ টকটকে লাল। অন্য জামরুল যেমন পাকার পর পরই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, এটা তেমন নয়।
আপেল জামরুল (বারি জামরুল ১):
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ জাতটির গাছে নিয়মিত প্রতি বছর ফল ধরে। এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয়। ফলের রঙ মেরুণ বলে অনেকে একে আপেল জামরুল নামেও ডাকেন। খেতে সুস্বাদু, মধ্যম রসালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল পাকে। ফল বড়, প্রতিটি ফলের ওজন ৩৫ গ্রাম। এ জাতটি ছাদে ড্রামে লাগানোর জন্য বাছাই করতে পারেন।
চাষ পদ্ধতি:
আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দোঁয়াশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে। সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারমাটি ভরবেন।
মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমর দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের মোক্ষম সময়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়। ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।

Sunday, July 22, 2012


কলা ক্ষেতের বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

কৃষি প্রতিবেদক \ এক সময় কেবলমাত্র পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য বসতবাড়ি সংলগ্ন আঙ্গিনায় কলা চাষ হতো। সময়ের তাগিদে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা বিবেচনায় কলা এখন একটি অন্যতম বানিজ্যিক ফসল। তবে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের রোগ ও পোকার আক্রমনে কলাক্ষেত আংশিক বা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। কলা ক্ষেতে সাধারণত কন্দের পোকা, জাব পোকা, মাকড় ও নিমাটোড জাতীয় পোকা এবং পানামা উইল্ট, পাতার দাগ, এ্যানথ্রাকনোজ, বাঞ্চিটপ, ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট এবং মোজাইক জাতীয় রোগদ্বারা আক্রামত্ম হয়। জৈব ও অজৈব উপায়ে কলা ক্ষেতের এসব রোগ ও পোকা দমন করা যায়। কন্দের পোকা/খোলের পোকা-এ পোকার রং লালচে বাদামী আবার চকচকে কালো রঙের হয়। ১ থেকে ১.৩ সেন্টিমিটার পর্যমত্ম লম্বা হয়। পিঠ শক্ত ও শরু শুড় যুক্ত। পূর্ণ বয়স্ক মা পোকা কলা গাছের গোড়ায় ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েই কন্দ ফুটো করে ভিতরে প্রবেশ করে। এ পোকা অনেক সময় কন্দ খেতে খেতে তেউড়/থোড় পর্যমত্ম পৌছে যায়। সামান্য আক্রামেত্ম গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়, অতি আক্রামেত্ম ফলন কমে যায় এবং আক্রামেত্মর মাত্রা ক্ষতির সীমা অতিক্রম করলে গাছ যে কোন স্থান থেকে খসে পড়ে বা হেলে মাটিতে পড়ে যায়। এ জাতীয় পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করতে হলে সুস্থ সবল গাছের থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে। চারা রোপন কালে প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম কারবারিল/৩০ গ্রাম ফুরাডান-৩জি/ অথবা ৫০ গ্রাম নিমপাতা/৫০ গ্রাম আতাপাতা/৩০ গ্রাম নিমবীজ/৩০ গ্রাম আতাবীজ এক লিটার পানিতে দ্রবিভূত করে প্রয়োগ করতে হবে।  লাল মাকড়-লাল মাকড় কলা গাছের কচিপাতা খেয়ে ফেলে এর ফলে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় পর্যায়ক্রমে ফলনও কমে যায়। এ পোকার আক্রমন হলে কেরাথেন গ্রুপের যে কোন ওষুধ প্রতি লিাটার পানিতে ১.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আতাপাতা, নিমপাতা এবং নিমখোল প্রতি লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম হারে অথবা আতাবীজ, নিমবীজ, বা তামাক পাতা প্রতি লিটার পানিতে ৩০-৫০ গ্রাম হারে দ্রবিভূত করে ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে। নিমাটোড-এ জাতীয় পোকা কলা গাছের শেকড়ে আক্রমন করে। এর আক্রমনে শেকড় বেটে হয়েযায়। কলাগাছ উপড়ে পড়ে। এ জাতীয় পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করতে গাছ লাগানোর আগে ৪০ গ্রাম হারে কার্বোফুরান জাতীয় ওষুধ গর্তের মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া উপরে উল্লিখিত মাত্রায় জৈব বালাইনাশক স্প্রে করে ফল পাওয়া যাবে। জাব পোকা-এ পোকা কলা গাছের কচিপাতা খেয়ে ফেলে। এর আক্রমনে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং ফলন কমে যায়। ইমিডাক্লোপ্রিড বা কার্বোসালফেন প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া উপরে উল্লিখিত মাত্রায় জৈব বালাইনাশক স্প্রে করেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে। (আগামী দিন থাকছে কলা গাছের বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া জনিত রোগ দমন ব্যবস্থাপনা)

Saturday, July 21, 2012



উচ্চ উৎপাদনশীল থাই কৈ মাছের চাষ


আরনেট নিউজ : আবহমান কাল হতে বাংলাদেশে জিওল মাছ সমূহ অত্যন্ত অভিজাত ও জনপ্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। জিওল মাছের মধ্যে কৈ, শিং, মাগুর অন্যতম। এ মাছ গুলি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের উৎস্য হওয়ায় রোগীর ও রোগ মুক্তির পর স্বাস্থ্যের ক্রমোন্নতির জন্য পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুদূর অতীতে প্রাকৃতিকভাবেই এদেশের নদ-নদী, খাল-বিল, প্লাবনভুমিতে এই মাছগুলি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। তাই এই মাছের চাষ বিষয়ে ভাববার অবকাশ ছিল না। কিন্ত বিগত কয়েক দশকে মাত্রাতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিমিত ও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার, কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও শিল্পায়নের ফলে পানি দূষন, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই মাছগুলি এখন আর সহজপ্রাপ্য নয়। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই এদেশের মৎস্যবিজ্ঞানী ও মৎস্যচাষীরা চাষের মাধ্যমে এই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশীয় জিওল মাছের প্রজনন, নার্সারী ব্যবস্থাপনা সহ উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনায় তেমন বেশী সাফল্য না আসায় বিদেশী জাতের মাগুর ও কৈ মাছ প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে। বিদেশী মাগুরের ধ্বংসাত্মক রাক্ষুসে স্বভাব হওয়ায় এ মাছটির চাষ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তবে দেশী কৈ এর পাশাপাশি আরেকটি নতুন জাত যা থাই কৈ নামে পরিচিত এখন দেশে সাফল্যজনক ভাবে চাষ করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে থাই কৈ মাছের সফলভাবে কৃত্রিমপ্রজনন ও প্রচুর পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। অধিক লাভজনক এবং দেশী কৈ মাছ অপেক্ষা অনেক বেশী উৎপাদন হওয়ায় বর্তমানে মৎস্য চাষীরা এই মাছ চাষে বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছে। কৈ মাছের একটি নতুন আমদানিকৃত জাত (Strain) যা থাই কৈ নামে পরিচিত এবং এটি একটি জিওল মাছ হওয়ায় এরা সামান্য পানিতে অনেক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। মাথা প্রায় ত্রিকোণাকৃতির। দেহ ফ্যাকাশে কালো ধরনের। রেনু পর্যায়- আর্টেমিয়া, জুপ্লাংটন, ক্ষুদ্র জলজ পোকামাকড় ইত্যাদি আকর্ষনীয় খাদ্য। জুভেনাইল পর্যায়- জুপ্লাংটন, ক্ষুদ্র জলজ পোকা, টিউবিফেক্স ওয়ার্ম ইত্যাদি এবং বয়োপ্রাপ্ত অবস্থায়-জলজ পোকামাকড়, বেন্থোস, টিউবিফেক্স, ক্ষুদ্র চিংড়ি, ডেট্রিটাস ও পঁচনরত প্রাণিজ দ্রব্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে।
থাই কৈ মাছ চাষের গুরুত্বঃ
থাই কৈ অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। অসুস্ত ও রোগমুক্তির পর স্বাস্থ্যে ক্রমোন্নতির জন্য খাদ্য হিসেবে এটি একটি সমাদৃত মাছ হিসাবে পরিচিত। ইহা অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ, খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন ও কপার যা হিমোগ্লোবিন তৈরীর জন্য অত্যাবশ্যক, সহজে পাঁচনযোগ্য চর্বি এবং অনেক এমাইনো এসিড ধারণ করে। অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এরা বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, ফলে জীবন- অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায় ফলে উৎপাদন দেশী কৈ অপেক্ষা অনেক বেশী। অন্যান্য মাছের তুলনায় চাহিদা ও বাজারমূল্য অনেক বেশী। সম্পুরক দানাদার খাদ্যে বর্ধন খুবই ভাল তাই এই মাছের চাষ অধিক লাভজনক। ব্যবস্থাপনার আওতায় আনলে ছোটবড় সব পুকুরেই থাই কৈ মাছ চাষ করা সম্ভব।
পুকুর নির্বাচনঃ
পুকুর নির্বাচনের উপর থাই কৈ চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। পুকুর নির্বাচনের সময় যে সকল বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো-
• যে সমস্ত জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করে না কিন্তু পানি ধারন ক্ষমতা বেশী এইরূপ মাঝারী উঁচু জমি এলাকার জলাশয় কৈ চাষের জন্য উপযোগী।
• সাধারনত দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটির পুকুর থাই কৈ চাষের জন্য বেশী উপযোগী।
• ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য আয়তাকার ও ৪০-৬০ শতাংশের পুকুর হওয়া ভাল।
• নার্সারী পুকুরের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
• পুকুরের গভীরতা ৩-৫ ফুট হওয়া ভাল।
• পানি পরিবর্তনের সুবিধা থাকা প্রয়োজন।
পুকুর প্রস্তুতিঃ
মজুদ পুকুর প্রস্তুতির সময় যে বিষয়গুলো অনুসরণ করা আবশ্যক তা হলো- পুকুর পাড় অবশ্যই ভালভাবে মেরামত করতে হবে। পুকুরের চারপাশে ১ মিটার উঁচু জাল দিয়ে ভালভাবে ঘিরে দিতে হবে। পুকুর পুরাতন হলে তলা ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রোটেনন প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন, ৫-১০ কেজি হারে গোবর ছিটিয়ে মই দিতে হবে এবং এরপর পরিস্কার নলকূপের পানি ১.৫-২ ফুট পর্যন্ত দিতে হবে।
মজুদ পুকুরে পোনা মজুদঃ
নার্সারী পুকুরে পোনাগুলি ১ মাস প্রতিপালনের পর সাধারনতঃ ৫-৬ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। এ অবস্থায় এদেরকে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। মজুদকালীন সময়ে পোনা মৃত্যু হার কমানোর জন্য পোনা ছাড়ার পূর্বে ৩% লবন পানি দিয়ে গোছল করানোর পর ছাড়তে হবে এবং পরিবহণ জনিত কারনে ক্ষতরোগ দেখা দিলে শতাংশে প্রতি ১ কেজি হারে লবন পানিতে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুর প্রস্তুতির ৭-৮ দিন পর বড় পোনা স্থানান্তর করতে হবে। ব্যবস্থাপনার উপর মজুদ হার নির্ভর করে। প্রতি শতাংশে ১০০০-১২০০ পোনা মজুদ করা ভাল তবে পানি পরিবর্তনের সুবিধা থাকলে শতাংশ প্রতি ১৫০০ টি পর্যন্ত বড় পোনা মজুদ করা যায়। থাই কৈ মাছের সাথে কার্প জাতীয় মাছের চাষ করা যাবে না তবে শিং বা মাগুর চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে দেশী মাগুর ২০টা শিং ১০টা মজুদ করা যেতে পারে।
খাদ্য প্রস্তুত ও প্রয়োগঃ
থাই কৈ মাছের নিয়মিত দৈহিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য সম্পুরক খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাংখিত ফলাফল পাওয়ার জন্য কৈ মাছের খাদ্যে কমপক্ষে ৩৫% প্রোটিন থাকা আবশ্যক। বর্তমানে থাই কৈ মাছের জন্য তুলনামুলক ভাবে বেশী প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বাজার জাত হচ্ছে। ভাল ফলাফল পাওয়ার লক্ষ্যে স্বনামধন্য স্পেকট্রা হেক্সা মেগা ফুড, আফতাব ফিশ ফিড, প্যরাগন ফিশ ফিড ইত্যাদি কোম্পানীর ভাসমান পিলেট খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। ভাসমান পিলেট খাদ্য প্রয়োগ করলে প্রয়োগকৃত খাদ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং পানির গুনাগুন সহজে নষ্ট হয় না। দুই ধরনের গবেষনায় দেখা গেছে ৫ সপ্তাহের পর থেকে ১০% দেহের ওজনের হারে খাবার দিলে ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই মাছের গড় ওজন ৭০ গ্রাম হয় কিন্তু এক্ষেত্রে FCR এর মান হয় ২.০-২.৫। অন্যদিকে ৫% হারে খাবার দিলে ৮ ওজনের হারে খাবার দেওয়াই উত্তম।
মজুদকালীর সময়ের উপর ভিত্তি করে খাদ্যের প্রকার ও প্রয়োগহার টেবিলের মাধ্যমে দেখানো হলো-
সময় খাবারের প্রকার প্রয়োগহার % দৈহিক ওজন
১ম সপ্তাহ ষ্টাটার-১ ২০
২য় সপ্তাহ ষ্টাটার-১ ১৫
৩য় সপ্তাহ ষ্টাটার-১ ১০
৪র্থ সপ্তাহ ষ্টাটার-২ ১০
৫ম সপ্তাহ থেকে আহরন পর্যন্ত গ্রোয়ার ৫
মাছ আহরণ ও উৎপাদনঃ
সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করলে ৯০ দিনের মধ্যেই থাই কৈ মাছ বাজারজাত করণের উপযোগী হয়। এ সময় থাই কৈ মাছ গড়ে ৬০-৭০ গ্রাম পর্যনৱ হয় এবং এদের বাঁচার হার ৬০-৭০% পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। থাই কৈ মাছের গড় উৎপাদন ৪ মাসে প্রতি শতাংশে ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত আশা করা যায়।
চাষকালীন সময়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ন দিকঃ
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও খাদ্য হার নির্নয়ের জন্য প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর নমুনায়ন করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নমুনায়নকৃত মাছগুলোকে পুকুরে ছেড়ে দিলে ক্ষত রোগ দেখা যায়। এক্ষেত্রে মাছগুলোকে পুকুরে ছাড়ার পূর্বে অবশ্যই ৩% লবন পানিতে গোছল করানো প্রয়োজন। অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহের ফলে পুকুরে ফাইটোপ্লাংটনের মাত্রারিক্ত অধিক্য দেখা যায় এই জন্য ১৫ দিন পরপর পুকুরের পানি আংশিক পরিবর্তন করা আবশ্যক। যে সমস্ত পুকুরে পানি পরিবর্তন করার সুবিধা থাকে না সে সমস্ত পুকুরে শ্রম পদ্ধতিতে এটি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ফাইটোপ্লাংটনের আবরন যে পাশে জমা হয় সেই পাশে পানি থেকে ১ফুট দুরে একটা গর্ত করতে হবে। পানি থেকে ৩-৪ ইঞ্চি গভীর নালা ঐ গর্তের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে ফাইটোপ্লাংটনের আবরণ আপনা আপনি গর্তে জমা হয়। তখন এটা বালতি দিয়ে সেচে ফেলতে হবে।
শীতকালীন ব্যবস্থাপনাঃ
অধিকাংশ সময়ই শীতকালে থাই কৈ মাছে ক্ষতরোগ দেখা দেয়। এজন্য শীতকালের পূর্বেই যথাসম্ভব থাই কৈ মাছের বাজার জাত করা উত্তম। তবে পুকুরে যদি বাজারজাতকরনের অনুপযোগী মাছ থাকে তবে শীতকালে অবশ্যই যে সকল ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা উচিত তা হলো পুকুরের পানি সেচে ১.৫-২ ফুটের মধ্যে এনে শতাংশ প্রতি ৫০০ গ্রাম চুন পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে ২ ফুট পরিস্কার নলকুপের পানি যোগ করতে হবে। এর ২-৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে লবণ পানির সাথে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে ১৫ দিন পরপর পানি পরিবর্তন করা আবশ্যক। মাছের ঘনত্ব কমিয়ে প্রতি শতাংশে ৫০০-৬০০ এর মধ্যে আনতে হবে। সর্বোচ্চ ০.৫-১% হারে খাবার দেয়া যেতে পারে এবং শীতকালে কোন অবস্থাতেই পুকুরে জাল টানা যাবে না।

বাগান এলাকাজুড়ে পাকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারার ভর মৌসুম শুরু। ঝালকাঠি-বরিশাল-পিরোজপুর জেলার ৩০টি গ্রামজুড়ে প্রায় ৩১ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে পেয়ারার রাজ্য। তাই দক্ষিণাঞ্চলের হাটবাজার আর বাগান এলাকাজুড়ে পাকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পাইকার এবং পেয়ারা চাষিদের বেচাকেনার ধুম চলছে পেয়ারার মোকামগুলোতে। 
এশিয়ার বিখ্যাত এ পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা সবরী বলা হয়। তবে জাতীয়ভাবে এটি পেয়ারা নামে পরিচিত। আর পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা ৪টি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাই পেয়ারাকে ভালোবেসে 'বাংলার আপেল' আবার কেউ 'গরিবের আপেল' হিসেবে গণ্য করে। 
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্রের অর্ধেক এই আড়াই মাস জমে ওঠে পেয়ারা বেচাকেনা। পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশি ছোট বড় ব্যবসা কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে বলা হয় পেয়ারার মোকাম। এ মোকামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরূপকাঠির আটগড়, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, শতদশকাঠি, বাউকাঠি। প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে পাইকারদের কাছে। তা কিনে ট্রলারযোগে নৌপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর ফাল্গুনে পেয়ারা গাছে ফুল ধরার পর অতিরিক্ত খড়ায় পানির অভাব দেখা দেওয়ায় ফুল ঝড়ার পাশাপাশি অনেক গাছও মারা যায়। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পেয়ারা চাষিরা গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সার এবং মাটি দিতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও এবার পেয়ারর ভালো ফলন হয়েছে। কেটে গেছে চাষিদের দুশ্চিন্তা। 
ঝালকাঠির কাঁচাবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষি জাহিদ মিয়া বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো খড়ার কারণে ফলন ভালো না হওয়ার ভয় ছিল। উপরওয়ালা সহায় থাকায় পেয়ারার ফলন এবার ভালোই হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরুতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে প্রতি মণ পেয়ারা ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকা। 
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জগদীশপুর গ্রামের পেয়ারা চাষি বিমল মিস্ত্রি জানান, প্রতিবছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পেয়ারা পচনশীল ফল। তাই দ্রুত পেকে যাওয়ায় তা সংরক্ষণ করে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বরিশালের উৎপাদিত পেয়ারা সড়ক পথে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। পেয়ারা চাষিরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পেয়ারা দ্রুত বাজারজাত করা যেত। তাই বিশেষ করে ঝালকাঠির শতাদশকাঠিতে নির্মাণাধীন ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। প্রায় ৫ বছর ধরে এ ব্রিজের কাজ সামান্য করে ফেলে রাখা হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে পেয়ারা চাষিদের বাগান থেকে সরাসরি ট্রাকযোগে প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতেই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা পেঁৗছে দেওয়া এবং পচন রোধ করা সম্ভব হত। 
আড়তদার লিটন হালদার বলেন, ভিমরুলী দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পেয়ারার মোকাম। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মণ পেয়ারা বিক্রি হয়। তবে বাউকাঠি থেকে ভিমরুলী হয়ে কীর্তিপাশা পর্যন্ত সড়ক পথ হলে দ্রুত প্রতিদিনের পেয়ারা প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় পেঁৗছানো সম্ভব হতো। ভিমরুলী মোকাম থেকে নৌপথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, নাটোর, বরিশাল হাজার হাজার মণ পেয়ারা যাচ্ছে। কিন্তু সড়ক পথের যোগাযোগ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে এসব জেলায় পেয়ারা নেওয়ার জন্য পাইকাররা চাষিদের আরো বেশি দাম দিয়ে পেয়ারা কিনত।


বিস্ময়কর লাভজনক জারবেরা ফুল চাষ

শাহাদত হোসেন কাবিল যশোর অফিস
টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা ফুলচাষ বিস্ময়কর লাভজনক। এক বিঘা জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করলে ৫০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ থেকে উৎপাদন খরচ বেরিয়ে গেলে কৃষকের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কিন্তু জারবেরা চাষে সমপরিমাণ জমি থেকে খরচ বাদে পাওয়া যায় প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকা। এ কথা জানান, যশোরের গোল্ডেন সিড ফার্মের পরিচালক হাফিজুর রহমান পিন্টু।
যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে সদর উপজেলার মালঞ্চিতে গোল্ডেন সিড ফার্ম ২০১১ সাল থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করছে।
ফার্মের পরিচালক জানান, তিন শতক জমিতে জারবেরার চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি চারার দাম ৩০ টাকা হিসেবে সাড়ে ৫০০ চারার দামই পড়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে সার, কীটনাশক, জমি তৈরি প্রভৃতির খরচ। প্রতিটি গাছে ৩৫টি করে ফুল ধরে। এ হিসেবে তিন শতকের ৫৫০টি গাছে ১৯ হাজার ২৫০টি ফুল ধরে। ১০ টাকা হিসেবে এই ফুলের দাম এক লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ লাভের পরিমাণ ৫২ হাজার টাকা। 
হিসাব অনুযায়ী এক বিঘায় খরচ পড়ে ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফুল বিক্রি হয় ২১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রকৃত লাভ পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। 
দেশে সর্বপ্রথম জারবেরা ফুলের চাষ শুরু হয় ফুলের রাজধানী বলে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে। সেখানকার চাষিরা ভারত থেকে টিস্যু কালচারের চারা এনে চাষ করতেন। আমদানিকৃত ওই চারার প্রতিটির দাম পড়ত ৯০ টাকা করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গবেষক মতিউর রহমান রাজশাহীর আকাফুজি ল্যাবে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে টিস্যু কালচারের চারা উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণায় সফল হন। এই চারার প্রতিটির দাম পড়ছে ৩০ টাকা করে।
গবেষক মতিউর রহমান জানান, জারবেরা ফুলের বীজ থেকে চারা হয় না। মূলগাছের সাকার থেকে যে চারা হয় তার ফুলের উৎপাদন কম। মানসম্পন্নও নয়। এ কারণে বংশবৃদ্ধির জন্য টিস্যু কালচার প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে একসাথে অল্প সময়ে জীবাণুমুক্ত অধিক চারা পাওয়া যায়। এই ফুলটি বহুবর্ষজীবী হওয়ায় একবার চারা রোপণ করলে বহু বছর ফুল পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর নতুন চারা লাগালে উৎপাদন বেশি হয়।
হাফিজুর রহমান পিন্টু জানান, ফুল ফোটার পর গাছে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। আর তোলার পর সতেজ থাকে আট থেকে ১৫ দিন। এই ফুলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোল্ডেন সিড ফার্ম ফুলচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য চার কাঠা জমিতে একটি প্রদর্শনী খামার করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গদখালির ফুলচাষিরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
জারবেরা চাষে লাভের কথা স্বীকার করে গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এখানকার চাষিরা এই লাভজনক ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। সমিতিভুক্ত চাষিরা এবার ১৫ একরে জারবেরার চাষ করেছেন। 
জারবেরা সূর্যমুখী প্রজাতির। ফুল দেখতে সূর্যমুখীর মতোই। এর নান্দনিক সৌন্দর্য ফুলের জগতে এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ৯ রঙের জারবেরার জাত আছে। এর মধ্যে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্ডা ও কমলা উল্লেখযোগ্য। যশোর জেলার মাটির পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্দেশক) ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ হওয়ায় জারবেরা চাষের উপযোগী। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাই জারবেরা চাষের উপযুক্ত সময়। 
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক হেমায়েত হোসেন জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা চাষ করলে ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস

গো-খাদ্য সঙ্কটের অবসান

বিপুল আশরাফ চুয়াডাঙ্গা
ঘাস আর আজ ফেলনা নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। আর এক বিঘা চাষ করতে পারলে কিস্তিমাত। সামান্য পরিশ্রমে কৃষক ঘরে তুলে আনে বছরে ৫০ হাজার টাকা। শুধু টাকার অঙ্কে নয়, এই নেপিয়ার ঘাস খেয়ে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের গরু ছাগল হচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট।
জানা গেছে, এক সময় জেলার অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। এসব জমিতে যে ঘাস হতো তা কৃষকেরা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে খাওয়াতো। কিন্তু বর্তমান আগের মতো আর অনাবাদি জমি নেই। এ ছাড়া জেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে প্রায় প্রতিটি ঘরে পালা হচ্ছে গরু-ছাগল। যে পরিমাণ গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছিল সেই পরিমাণ কাঁচা ঘাস বা অন্য খাবারের তেমন কোনো উৎপাদন ছিল না। পশুসম্পদ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নেপিয়ার ঘাস গো-খাদ্যের জন্য খুবই পুষ্টিমানসম্পন্ন। এই সংবাদে জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় পাঁচ-ছয় বছর থেকে চাষ করা হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। দেখাদেখি এখন চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলাতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। প্রথমদিকে নিজেদের গরু-ছাগলের খাওয়ানোর মতো অল্প পরিমাণে ঘাস আবাদ শুরু হয়। পরে এর সুফল বুঝতে পেরে অনেক কৃষক নিজের অথবা বর্গা নেয়া ৫-১০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করছেন।
চুয়াডাঙ্গা ছাগল খামারের ব্যবস্থাপক আরমান আলী বলেন, মে-জুন মাসে নেপিয়ার ঘাস লাগানোর উপযুক্ত সময়। নেপিয়ার গ্রীষ্মকালীন স্থায়ী ঘাস। আখের মতো দুই-তিন মিটার লম্বা হয়। বিভিন্ন জাতের ঘাস থাকলেও দেশে বাজরা জাতের নেপিয়ার চাষ বেশি হয়। একবার লাগালে তিন বছর ঘাষ দেয়। দুই ফুট দূরত্বে ৪৫ ডিগ্রি কোণে এই ঘাসের মেথা বা চারা লাগাতে হয়।
কার্পাসডাঙ্গার কৃষক মাছুম আহমেদ বলেন, তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস আবাদ করেছেন। সেচ সার দিতে হয় নিয়মিত। এ ঘাস একবার লাগালে এক বছর ধরে কাটা যায়। এক দিক থেকে কাটতে কাটতে অপর দিকে শেষ হলে অন্য দিক আবার ঘাস কাটার উপযোগী হয়। 
দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের একাধিক কৃষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, নেপিয়ার ঘাস লাগানোর ৪৫ দিন পর এর কাটিং দেয়া যায়। অর্থাৎ বছরে ছয়-সাতবার জমি থেকে নেপিয়ার ঘাস কাটা যায়। প্রতি দেড় মাসে লাভ হয় পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। প্রতিবার কাটিংয়ে সার সেচ দিয়ে েেতর পরিচর্যা করতে হয়। প্রতি বিঘা চাষে প্রথমে খরচ হয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এর পর প্রতি কাটিংয়ে খরচ হয় এক হাজার টাকা। সব খরচ বাদে প্রতি বিঘায় বছরে নিট লাভ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ঘাস চাষের কারণে এলাকায় জমির চাহিদা বেড়ে গেছে। আগে যে জমির লিজ ছিল চার হাজার এখন তা ছয়-আট হাজার টাকা। এক বিঘা নেপিয়ার ঘাস অনায়াসে ২০-২৫টি গরুর খাওয়ার চাহিদা মেটায়।
গ্রাম ও শহরে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে কৃষকেরা নেপিয়ার ঘাষ বিক্রি করছে। প্রকারভেদে প্রতি আঁটি ঘাঁসের দাম পাঁচ-আট টাকা। শুকনা ধানের বিচালির থেকে নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিমান অনেক বেশি। এ জন্য বেশিরভাগ কৃষক তাদের গরু-ছাগলকে নেপিয়ার ঘাস খাওয়াচ্ছেন। এতে যেমন এক দিকে খরচ কমছে, অপর দিকে গরু হচ্ছে হৃষ্টপিষ্ট।
চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙা ব্রিজ মোড়ে ঘাস বিক্রেতা শামু জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেপিয়ার ঘাস ক্রয় করে বিক্রি করেন। ছয়-সাত বছর ধরে এই কাজ করছেন। প্রতি আঁটি সাড়ে তিন টাকা দরে ক্রয় করে বিক্রি করছেন পাঁচ টাকা। প্রতিদিন ২০০-২৫০ আঁটি ঘাস বিক্রি হয়। 
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এ ঘাস উৎপাদনে খরচ খুব কম হয়। অপর দিকে ঘাস উৎপাদন করায় গরুর খাদ্য সঙ্কট কমে আসছে। এ জন্য ঘাস আবাদ করতে চাষিদের নানা রকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলায় ৬০ হেক্টর।

জলাবদ্ধতা-উদাসীন ইউপি চেয়ারম্যান

বটতৈল-টাকিমারা বিলের মাঠে ৫০ হেক্টর জমির আমন চাষ বিঘ্নিত

এস কে বাশার \ জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ ব্যহত হচ্ছে বলে দাবি করেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বটতৈল, ভাদালিয়াপাড়া, টাকিমারা, বড়িয়ার কৃষকরা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিয়েও সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ কৃষকদের। কৃষকরা জানান, প্রতি বছরেই ওই বিলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিগত বছরে বৃষ্টি মৌসুমের শুরুতেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলেও এবার তার ব্যাতিক্রম ঘটেছে। উপরন্তু চেয়ারম্যানের কাছে সহযোগীতা চেয়েও কাজ হয়নি। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বটতৈল-টাকিমারা বিলের মাঠে যেয়ে দেখা গেছে চারিদিকে ফসল ঘেরা প্রায় ২০০ হেক্টর প্রশসত্ম মাঠ। চারি দিকে ফসল থাকলেও বিলের মাঝখানে ঢেউ খেলছে আষাঢ়ের পানি। টাকিমারার কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিলের তলায় তার ২ বিঘা আমনের জমি রয়েছে। চারার বয়স হয়েছে এখনও জমি চাষ দিতে পারছেন না পানি বেশি থাকায়। একই এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, চারার বয়স ১০ দিন বেশি হয়েছে। কিন্তু তার দেড় বিঘা জমি ২ ফুট পানির নেচে থাকায় চারা রোপণ করতে পারছেন না। টাকিমারার মোফাজ্জেল হোসেন, বটতৈল টাকিমারার আব্দুর রহমান, ভাদালিয়া পাড়ার আবুল কাশেম, বটতৈল ভাদালিয়া পাড়ার হাবিল শেখও একই অভিযোগ করেছেন। কৃষকরা বলেন, বিলের পানি নিস্কাশনের জন্য ক্যানাল রয়েছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ক্যানাল ভরাট হয়েছে। যার ফলে পানি নিস্কাশিত না হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। তারা বটতৈল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলুর কাছে পানি নিস্কাশনের মৌখিক আবেদন নিয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘‘বাজেট নাই টাকা পাবো কোথায়’’? বাজেট আসলে তার পরে কাজ হবে। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোল্লা হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বর্ষার আগে থেকেই নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নিষ্কাশন ক্যানেলটি নিজ উদ্যোগেই সংস্কার করে দিতেন। এ জন্য এখনও তিনি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেননি। পানি নিস্কাশিত না হওয়ায় তিনি নিজেও চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। বটতৈল-টাকিমারা বিলের পানি নিস্কাশন ক্যানেলটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা এব্যাপারে জানতে চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলুর ব্যাবহৃত ০১৭৩৪০১৮৭৯২ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উদাসীন ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘কৃষকরা যোগাযোগ করছিল, তাদের জানা দিছি, পরে সংস্কার করে দেবো’’। গতকাল বিকেলে যখন এই ফোনালাপ তখন তিনি বলেন ‘‘এখন পুকুর পাড়ে বইসে হাওয়া খাচ্ছি, বাজেট পালিই কাজ কইরে দেবোনে’’। বৃষ্টির পানিতে যখন হাবুডুবু খাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। কৃষকের বীজতলার চারা নষ্ট হবার উপক্রম। তখন বটতৈল ইউপি চেয়ারম্যান কবির ভঙ্গিতে দখিনা হাওয়ায় মন ভাসিয়েছেন। কৃষকরা জানান, তাদের সমস্যা জানার পর চেয়ারম্যান অমত্মত একবার এলাকায় এসে তাদের দিকে আমত্মরীকতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারত।

Friday, July 20, 2012


ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ


আরনেট নিউজ : গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ। দেশের প্রায় সকল এলাকার স্বাদুপানির জলাশয় গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা আছে বিধায় গলদা চিংড়ি চাষ যথেষ্ট লাভজনক। দেশের অপেক্ষাকৃত নিচু ধানের জমিতে ঘের পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। ঘের হলো অপেক্ষাকৃত নিচু ধানের জমি যার চারপাশে উঁচু জমি থাকে অথবা মাটির শক্ত বাঁধ থাকে। বর্ষাকালে ঘের পানিতে ভরে যায় বলে এই মৌসুমে ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। ঘেরে এপ্রিল-মে বা বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে ধান কাটার পর গলদা চিংড়ির চাষ করা হয় অর্থাৎ ঘেরে প্রথমে ধান চাষের পর সেখানে চিংড়ি চাষ করা হয়। আবার চিংড়ি আহরণ করার পর সেখানে ধান চাষ করা হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘের পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনেক নিচু জমি রয়েছে যেখানে শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ হয় কিন্তু বর্ষাকালে সেগুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসব জমিতে চিংড়ির চাষ করে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়।
ঘেরের বৈশিষ্ট্য
একটি ঘেরের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকলে তা গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা যায়ঃ
* গলদা চিংড়ি চাষের জন্য নির্বাচিত ঘেরে ৪-৬ মাস ৩.০-৪.০ ফুট উচ্চতার পানি ধরে রাখার সুবিধা থাকতে হবে।
* ঘেরের মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি থাকতে হবে যাতে ঘের তাড়াতাড়ি শুকিয়ে না যায়।
* সাধারণত দোআঁশ বা বেলে-দোআশ মাটির ঘের গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত।
* ঘের একটু নিচু জায়গায় হলে পানি ধরে রাখতে সুবিধা হয়।
* ঘেরে বন্যার পানি যেন প্রবেশ না করতে পারে এবং বন্যা বা বৃষ্টির পানিতে বাঁধ যেন প্লাবিত না হয়। নিচু ঘেরের বাঁধ উঁচু করে বেঁধে বন্যামুক্ত করে চিংড়ি চাষের উপযুক্ত করা যায়।
* ঘেরের আকার ৩০-১০০ শতাংশ হলে ব্যবস্থাপনার জন্য সুবিধা হয়।
* ঘেরে যথেষ্ট সূর্যালোক পড়তে হবে।
* ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা
ঘের প্রস্তুতকরণ
ঘেরে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ঘের প্রস্তুতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘের যত ভালভাবে প্রস্তুত করা হবে চিংড়ির উৎপাদন তত বেশি হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাঁধ নির্মাণ
* ঘেরের চারপাশে বাঁধ বা উঁচু জমি না থাকলে সেখানে বাঁধ নির্মাণ করে নিতে হবে। যে সব ঘেরের বাঁধ বা চারপাশের জমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় না তেমন ঘের নির্বাচন করতে হবে।
* বাঁধ ভাঙ্গা থাকলে তা মেরামত করতে হবে।
* বাঁধ যথেষ্ট শক্ত হতে হবে যাতে পানির চাপে ভেঙ্গে না যায় এবং চিংড়ি বের হয়ে যেতে না পারে।
* বাঁধ যথেষ্ট উঁচু হওয়া উচিত যাতে বন্যার পানি সেখানে প্রবেশ না করতে পারে।
* বাঁধ যথেষ্ট প্রশস্ত করে তাতে শাকসবজির চাষ করা যেতে পারে।
নালা খনন
* চিংড়ির চলাচল এবং অবস্থানের সুবিধার্থে ঘেরে নালা খনন করতে হবে।
* নালা খননের ফলে এতে সবসময় পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়।
* অত্যধিক গরমের সময় চিংড়ি নালায় এসে আশ্রয় নিতে পারে।
* ঘেরে যখন ধান চাষ হয় তখন নালা নার্সারী হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
ঘেরের মাটি এবং জমির উপরিপৃষ্ঠের ধরনের উপর ভিত্তি করে ঘেরের চতুর্দিকে, মাঝখানে অথবা যে কোনো এক বা দুই পাশে নালা খনন করা যায়। বাঁধের ভিতরে জমির সমতা বা ঢাল অনুসারে নালা খনন করতে হবে। নালার দৈর্ঘ্য হবে ঘেরের আয়তনের অনুপাতে। নালার প্রস্থ কমপক্ষে ৪-৬ ফুট এবং সমতল এলাকা থেকে গভীরতা ১.৫-২.০ ফুট হলে ভাল।
পানি নির্গমন পথ তৈরি
বর্ষাকাল বা অন্য যে কোনো কারণে যদি ঘের পানিতে পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার জন্য বাঁধে পানি নির্গমন পথ তৈরি করতে হবে। চিংড়ি যাতে বের হয়ে যেতে না পারে সে জন্য নির্গমন পথের মুখে জাল বা বাঁশের বানা স্থাপন করতে হবে।
নালা শুকানো, কাদা অপসারণ ও চাষ দেওয়া
নালা থেকে পানি নিষ্কাশন করে কাদা অপসারণের পর তা রৌদ্রে শুকাতে হবে । নালা ও জমিতে চাষ দিতে হবে এবং ধানের গোড়া অপসারণ করতে হবে।
চুন ও সার প্রয়োগ
নালা ও সমস্ত জমিতে ১ কেজি/শতাংশ হিসাবে চুন প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে এবং নালার জৈব সার (প্রতি শতাংশে ৫-৬ কেজি গোবর, অথবা ৮-১০ কেজি কম্পোষ্ট অথবা ৩-৫ কেজি হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা) প্রয়োগ করতে হবে এবং তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পানি প্রবেশ করানোর পর অজৈব সার (প্রতি শতাংশে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি) প্রয়োগ করতে হবে।
পানি প্রবেশ করানো
ধানকাটার পর ঘের সাধারণত আস্তে আস্তে বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। তবে নালা শুকনোর পর তাতে জুভেনাইল (চিংড়ি পোনা) মজুদ করতে চাইলে অন্যান্য উৎস, যেমন-ডিপ টিউবয়েল, আশপাশের নদী,খাল, দীঘি ইত্যাদি থেকে পানি সরবরাহ করতে হবে।
আগাছা অপসারণ
ঘেরের বাঁধে সূর্যালোককে বাধাদানকারী গাছপালা থাকলে তা অপসারণ বা ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। নালা যদি শুকনো সম্ভব না হয় তবে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দূরীকরণ
নালা যদি শুকানো সম্ভব না হয় তবে রোটেনন বা অন্য কোন বিষ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত জলজ প্রাণী দূর করতে হবে।
আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা
ঘের পানিতে পূর্ণ হলে তাল, নারিকেল ও খেজুরের পাতা, বাঁশের কঞ্চিসহ আগালি, প্লাস্টিকের ভাঙ্গা পাইপ ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করে জুভেনাইলের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
জুভেনাইল মজুদ
গলদা চিংড়ির পোনাকে পিএল (post larvae) বলা হয় এবং অপেক্ষাকৃত বড় পোনাকে জুভেনাইল বলা হয়। ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে জুভেনাইল-এর আকার একটু বড় হতে হবে এবং তা কমপক্ষে ৫.০ সে.মি. আকারের হলে ভাল হয়। নার্সারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পিএল থেকে জুভেনাইল তৈরি করে তা ঘেরে ছাড়তে হবে। ঘেরের নালা বা নালার একটি অংশ অথবা আলাদা ছোট পুকুর নার্সারী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ঘেরে জুভেনাইল মজুদ হার নির্ভর করে চাষ পদ্ধতি, চাষের সময়কাল, জুভেনাইলের প্রাপ্যতা, মাটি ও পানির গুণাগুণ, ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল ইত্যাদির উপর। যদি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করা হয় তবে মজুদ ঘনত্ব কম হবে, তৈরি খাদ্য সরবরাহ করলে মজুদ ঘনত্ব বেশি হবে, পাশাপাশি পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলে মজুদ ঘনত্ব আরও বেশি হবে। তৈরি খাদ্য সরবরাহ করলে প্রতি শতাংশে ৪০-৬০টি জুভেনাইল ছাড়তে হবে। অতিরিক্ত প্লাংকটন নিয়ন্ত্রণের জন্য শতাংশ প্রতি ২-৪টি সিলভার কার্প এবং কাতলার পোনা ছাড়তে হবে। জুভেনাইল ছাড়ার আগে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। মে-জুলাই মাসে জুভেনাইল ছাড়তে হয়। এ সময় জমিতে ২-৩ ফুট পানি থাকলে ভাল হয়। জমিতে পানি না থাকলে ঘেরের নালায় জুভেনাইল ছাড়তে হবে।
অনেক সময় ঘেরের নালা বা নালার অংশ নার্সারী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নালায় পিএল লালন করার পর বৃষ্টিতে যখন নালা পরিপূর্ণ হয়ে পানি সারা ঘেরে ছড়িয়ে পড়ে তখন জুভেনাইলও সারা ঘেরে ছড়িয়ে পরে। এক্ষেত্রে কী পরিমাণ জুভেনাইল মজুদ করা হলো তা জানা সম্ভবপর হয় না। কিন্তু উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ঘেরে কী পরিমাণ জুভেনাইল ছাড়া হলো তা অবশ্যই জানা দরকার। তাই নালাতে উৎপাদিত জুভেনাইল অবশ্যই গণনা করে সারা ঘেরে ছাড়তে হবে।
মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
প্রাকৃতিক খাদ্য
চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্যে গলদা চিংড়ি চাষকালীন সময়ে পুকুরে ১৫ দিন পর পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৪ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে। তবে সার প্রয়োগের মাত্রা পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের উপস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
সম্পুরক খাদ্য
ঘেরে নিয়মিত সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। নিচের সূত্র অনুযায়ী নিজেরা খাদ্য তৈরি অথবা বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য ক্রয় করা যেতে পারে।
সারণী ১. গলদা চিংড়ির জন্য খাদ্য তৈরির সূত্র
চিংড়ির বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা
চিংড়ি ঘেরে ছাড়ার পর থেকে গলদা চিংড়ির বৃদ্ধির হার প্রথমে বেশি থাকে এবং পরবর্তীতে কমতে থাকে। চিংড়ি বেঁচে থাকার হার, দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, রোগ-বালাই ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের জন্য নালা থেকে ঝাঁকি জাল দ্বারা ৫-৭ বার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হবে। সকালে বা বিকালে এ কাজটি করতে হবে। রোগলক্ষণ পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথেই প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘের নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে এবং কোনো অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পানির গুণাগুণ অনুকূল মাত্রায় রাখতে হবে। অতি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ঘেরের পানি দ্রুত বেড়ে গেলে নির্গমন নালার মাধ্যমে পানি বের করে নিতে হবে।
চিংড়ি আহরণ ও উৎপাদন
অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ঘেরের পানি কমে গেলে চিংড়ি আহরণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে একর প্রতি ২০০-২৫০ কেজি উৎপাদন হয়ে থাকে।
বড় গ্রেডের প্রতি কেজি চিংড়ির মূল্য অপেক্ষাকৃত ছোট চিংড়ির তুলনায় অনেক বেশি বিধায় আহরণের পর কিছু চিংড়ি পুনরায় নালায় মজুদ করা হয় যাতে পরবর্তী মৌসুমে বৃদ্ধি পেয়ে বড় গ্রেডের চিংড়িতে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকলে অধিকাংশ চিংড়ি মারা যেতে পারে। চাষের শুরুতে আগের বৎসরের ওভার উইন্টার (বাড়তি মজুদের পোনা) করা জুভেনাইল মজুদ করলে এক মৌসুমেই বড় গ্রেডের চিংড়ি পাওয়া সম্ভব।
একটি ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষের আয়-ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব নিচে দেখানো হলো।
সারণী ২. এক একরের একটি ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষের আয়-ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব-
উপসংহারঃ
স্বাদুপানির চিংড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি হলো গলদা চিংড়ি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পানি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গলদা চিংড়ি বাগদা চিংড়ির চেয়ে কম রোগাক্রান্ত হয়। সারাদেশের অসংখ্য পুকুর জলাশয়ের পাশাপাশি নিচু ধানক্ষেতে ধানের সাথে বা ঘের পদ্ধতিতে ধান কাটার পরে গলদা চিংড়ির চাষ করলে চিংড়ি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


পেঁপে চাষ


আরনেট নিউজ : আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভর করে। তাই এ দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি ও ফলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশে পেঁপে খুবই জনপ্রিয় ফল । শুধমাত্র ফলই নয় সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পেঁপের ইংরেজি নাম Papaya ও বৈজ্ঞানিক নাম Carica papaya. আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি পেঁপে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গাতেই পেঁপে জন্মায় তবে বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা ও যশোরে খুব ভাল মানের পেঁপে উৎপন্ন হয়।
* পুষ্টিমাণ
* বাজার সম্ভাবনা
* পেঁপে উৎপাদন কৌশল
* পেঁপে উৎপাদন খরচ
* প্রশিক্ষণ
* সচরাচর জিজ্ঞাসা
পুষ্টিমান
পেঁপেতে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি আছে।
ঔষধিগুণ
অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, অন্ত্রিক ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমিনাশক ও প্লীহা যকৃতের জন্য উপকারী।
বাজার সম্ভাবনা
আমাদের দেশে প্রায় সারাবছরই পেঁপে পাওয়া যায়। ফল এবং সবজি হিসেবে পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। কাঁচা পেঁপে সবজি ও সালাদ হিসেবে খাওয়া হয় এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। তাই কমবেশি সবার কাছে সব সময় এর চাহিদা থাকে। পেঁপে চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। পেঁপে বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পেঁপে উৎপাদন কৌশল
জাত
স্থানীয় পেঁপে ও শাহী পেঁপে বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হয়।
* চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
জলবায়ু মাটির প্রকৃতি
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। শাহী পেঁপে সারাবছর চাষ করা যায়। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দো-আঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরণের মাটিতেই পেঁপে চাষ করা যায়।
চারা তৈরি
১. বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।
২. পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩. ১৫ X ১০ সে.মি. আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে।
৪. তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে একটি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে।
৫. একটি ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়।
চারা রোপণ পদ্ধতি
১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।
৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।
৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
রোগবালাই
পেঁপের ঢলে পড়া রোগে প্রচুর গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পচা রোগও হয়ে থাকে। পিথিয়াম এ্যাফানিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। অনেক সময় জিংকের অভাবে মোজাইকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রতিকার
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
চাষের সময় পরিচর্যা
১. প্রতি গর্তে ৩টি চারা রোপণ করা যায়।
২. ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।
৩. পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
৪. ফুল থেকে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
৫. গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।
উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ
সাধারণত এক বছরের মাথায় পেঁপে গাছে ফল ধরে। একটি গাছে বছরে ২০ থেকে ৫০টি ফল ধরে সেই হিসেবে এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ৭৭০০ থেকে ১৬৭৫০টি পেঁপে ধরে।
পেঁপে উৎপাদন খরচ
* ১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ফসল উৎপাদন খরচ
খরচের খাত পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা)
বীজ/চারা ৪০০টি ২০০০
জমি তৈরি ৪০০টি মাদা তৈরি ৩৬০০
পানি সেচ ২ বার ৪০০
শ্রমিক ৩ জন ৪৫০
সার প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার
এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এর জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)
টিএসপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৩ টাকা)
ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=১৫ টাকা)
এমপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৮ টাকা)
জিপসাম=৩৪ গ্রাম (১ কেজি=১২ টাকা)
বোরাক্স=৪ গ্রাম (১ কেজি=১৫০ টাকা)
জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম (১ কেজি=৮০ টাকা) ৫০
কীটনাশক প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিজস্ব/দোকান
জমি ভাড়া একবছর ৪০০০
মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
(তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, অক্টোবর ২০১১)
মূলধন
এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁপে চাষের জন্য প্রায় ৮০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
পেঁপে চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পেঁপে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
৬. দুই সারির মাঝখানে নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ
ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।